অভাব-অনাহারে কেটেছে জীবনের দীর্ঘ সময়। টিকিট ছাড়াই ট্রেনে যাতায়াত, কখনো ধনেপাতা বিক্রি করেই জীবিকা—এমন সংগ্রামী জীবন থেকেই উঠে এসেছেন বলিউডের অন্যতম প্রশংসিত অভিনেতা নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী। ১৯ মে তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে ফিরে দেখা যাক এই অনন্য অভিনেতার জীবনগাথা।
উত্তর প্রদেশের মুজাফফরনগরের ছোট শহর বুধানার সন্তান নওয়াজ অভিনয়ের নেশায় পাড়ি জমান মুম্বাইয়ে। প্রথমদিকে কোনো সুযোগ না পেয়ে তিনি সামান্য পারিশ্রমিকে এক্সট্রা চরিত্রে অভিনয় করতেন, যার বড় অংশই কাস্টিং সমন্বয়কারীদের পকেটে চলে যেত। এরপর ভর্তি হন ভারতের ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামায় (NSD)।
১৯৯৯ সালে আমির খানের ‘সারফারোশ’-এ একটি ক্ষুদ্র চরিত্রে প্রথম অভিনয়। এরপর ‘দ্য বাইপাস’-এ ইরফান খানের সঙ্গে কাজ করে প্রশংসা পেলেও বড় কোনো চরিত্র মিলছিল না।
সব কষ্ট আর প্রত্যাখ্যানের অবসান ঘটে ২০১২ সালে ‘গ্যাংস অব ওয়াসিপুর’-এর ‘ফয়জাল খান’ চরিত্রে। সেই বছরই ‘কাহানি’, ‘পাতাং’, ‘পান সিং তুমার’, ‘তালাশ’, ‘চিটাগং’, ‘মিস লাভলি’-তে অভিনয় করে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করেন। এরপর ‘বদলাপুর’, ‘মাঝি: দ্য মাউন্টেনম্যান’, ‘রইস’, ‘হারামখোর’, ‘মান্টো’, ‘রাত আকেলি হ্যায়’সহ অনেক ছবিতে অসাধারণ অভিনয়ের নজির রেখেছেন।
নওয়াজ জানান, সংগ্রামের দিনগুলোর কিছুই তিনি ভোলেননি। একবার ধনেপাতা বিক্রির জন্য ২০০ রুপির পাতা কিনে ট্রেনে উঠলেও গন্তব্যে পৌঁছার আগেই পাতা শুকিয়ে যায়। আরেকবার ৪,০০০ রুপি পারিশ্রমিক পেয়ে অর্ধেক দিয়ে কাস্টিং সমন্বয়কারীকেই দিতে হয়।
আজ তিনি সফল, তবু বিনয়ী। বলেন, “একজন অভিনেতার উচিত সব ধরনের ঘরানার জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখা। পরিচালকরা আমার ওপর আস্থা রেখেছেন, সেটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।”
ওটিটিতে তাঁর উপস্থিতি বেশি, কারণ হল পায় না তাঁর সিনেমা। তিনি বলেন, “তথাকথিত তারকাদের ছবিই স্ক্রিন দখলে রাখে, আমাদের সিনেমা হলে চলে না—তাই ‘আফওয়া’ বা ‘জোগিরা সারা রা রা’র মতো কাজ ওটিটিতেই ভালো করে।”
ব্যক্তিজীবনে তাঁর মেয়ে শোরা তাঁর সবচেয়ে বড় সমালোচক। নওয়াজ বলেন, “শোরা আমার অভিনয়ে ভুল ধরতে ছাড়ে না। বয়সী তরুণদের সমালোচনা খাঁটি হয়।”
সম্প্রতি তিনি কাজ করেছেন জি-ফাইভ মুক্তিপ্রাপ্ত ওয়েব সিনেমা ‘কোস্টাও’-তে, যা নির্মিত হয়েছে গোয়ার কাস্টমস অফিসার কোস্টাও ফার্নান্দেজের জীবন অবলম্বনে।