নিজেকে সবখানেই ব্যবসায়ী পরিচয় দিলেও, আয়কর নথিতে প্রতি অর্থবছরে মাত্র তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা আয়ের তথ্য পাওয়া গেছে জুনায়েদ ইবনে সিদ্দিকীর। কিন্তু তাঁর ২৯টি ব্যাংক হিসাবে জমা রয়েছে ২৩ কোটি টাকার বেশি। শুধু তাই নয়, তাঁর গৃহিণী স্ত্রী ফাতেমাতুজ জোহরার ১৬টি ব্যাংক হিসাবেও রয়েছে প্রায় ১১ কোটি টাকা। ঢাকায় রয়েছে একটি পাঁচতলা বাড়ি ও একাধিক ফ্ল্যাট। সবমিলিয়ে আলোচনায় উঠে এসেছেন এই দম্পতি।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অনুসন্ধান বলছে, আমদানি-রপ্তানির ব্যবসার আড়ালে বিদেশ থেকে মাদকের কাঁচামাল এনে ঢাকার মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকায় বিক্রি করতেন জুনায়েদ। দীর্ঘ চার বছর ধরে চলা তদন্তে উঠে এসেছে, এই মাদক ব্যবসার মাধ্যমেই গড়ে তোলা হয়েছে বিপুল সম্পদ।
২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ থেকে ১২ কেজি ৩২০ গ্রাম অ্যামফিটামিন জব্দের ঘটনার পর পুলিশের প্রাথমিক মামলায় জুনায়েদের নাম না থাকলেও, তদন্তে তাঁর সম্পৃক্ততা প্রকাশ পায়। এরপর থেকেই তার অর্থ ও সম্পদের উৎস নিয়ে তদন্ত শুরু করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।
মামলার নথিতে বলা হয়েছে, জুনায়েদের স্ত্রী ফাতেমাতুজ জোহরার কোনো আয়ের উৎস নেই, কিন্তু তাঁর নামে ১৬টি ব্যাংক হিসাবে জমা রয়েছে ১০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা এবং রয়েছে ৪ কোটি টাকার স্থায়ী আমানত।
এদিকে জুনায়েদের দাবি, তিনি টেক্সটাইল ও রাসায়নিক আমদানি-রপ্তানির ব্যবসা করেন। তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, পুরান ঢাকায় তাঁর প্রতিষ্ঠান ‘আইডিএস ট্রেডার্স’-এর মাধ্যমেই গোপনে মাদকদ্রব্যের কাঁচামাল আমদানি করতেন তিনি।
পিবিআই সম্প্রতি বিমানবন্দর থানায় দায়ের করা মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দিয়েছে। এতে জুনায়েদ, আবুল কালাম আজাদ, ফারহানা আফ্রিন, দীন ইসলাম, কুদ্দুস মিয়া, মামুন, রতন কুমার মজুমদার ও নজরুল ইসলামসহ মোট ১০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে সাতজন জামিনে মুক্ত, আর তিনজন—যার মধ্যে ফাতেমাতুজ জোহরাও আছেন—পলাতক।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আলী আসলাম হোসেন জানান, এই চক্রের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলাটি আদালতে চলমান। উপপরিচালক খোরশেদ আলম জানিয়েছেন, আরও সম্পদের খোঁজ চলছে এবং শিগগিরই আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম শুরু হবে।