ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে রাজধানীসহ সারা দেশে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। একই সময়ে মানুষের চলাচল ও কেনাকাটা বেড়ে যাওয়ায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে এক ভয়ঙ্কর প্রতারক চক্র, যাদের পরিচিতি ‘শয়তানের নিঃশ্বাস’ নামে। এই চক্রটি সাধারণত বাস, লঞ্চ, ট্রেন স্টেশন এবং পশুর হাটের ভিড়ে ছদ্মবেশে অবস্থান করে। এরা পরিপাটি পোশাক ও স্বাভাবিক আচরণে নিজেদের সাধারণ মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করে।
প্রতারক চক্রটি মূলত ‘স্কোপোলামিন’ নামের একটি রাসায়নিক ব্যবহার করে মানুষকে অচেতন করে সর্বস্ব লুটে নেয়। এই মাদকটি খুব কাছ থেকে শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করানো হয় এবং ২০ থেকে ৬০ মিনিটের মধ্যেই এটি মানুষের স্মৃতি, চিন্তা এবং ইচ্ছাশক্তি অবশ করে ফেলে। আক্রান্ত ব্যক্তি অজান্তেই নিজের জিনিসপত্র অপরিচিতদের হাতে তুলে দেন এবং পরবর্তী সময়ে কিছুই মনে রাখতে পারেন না।
স্কোপোলামিন, যা দক্ষিণ আমেরিকায় ‘বুরুন্ডাঙ্গা’ নামে পরিচিত, একসময় চিকিৎসায় ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে এটি ভয়ঙ্কর অপরাধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বাংলাদেশেও এই মাদকের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনার মধ্যে রয়েছে—
-
২৮ মে, ঢাকা: রাইড শেয়ারিংয়ের হেলমেটে থাকা স্কোপোলামিনের মাধ্যমে এক নারীকে অচেতন করে ধর্ষণের অভিযোগ।
-
২০ মে, কুমিল্লা: এক ব্যবসায়ীর ক্যাশবাক্স থেকে টাকা লুট করে পালিয়ে যায় একটি চক্র, যাদের পরবর্তী সময়ে গাজীপুরে দেখা যায়।
-
২ জুন, চট্টগ্রাম: পটিয়ায় এক অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা হারান এক লাখ টাকা।
-
১৭ এপ্রিল, লক্ষ্মীপুর: ব্যাংক থেকে টাকা তুলে বের হতেই ৮০ হাজার টাকা খোয়ান এক নারী।
-
২০ এপ্রিল, বরগুনা: একই কৌশলে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয় এক লাখ টাকা।
চক্রের সদস্যরা অনেক সময় ভিজিটিং কার্ড, কাগজপত্র বা টাকার নোট দেখিয়ে সাহায্য চায়, যেগুলোর গায়ে থাকা স্কোপোলামিন বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। কেউ কেউ হেলমেট বা হাত ধরা কাপড়েও এই রাসায়নিক ব্যবহার করে থাকেন। আক্রান্ত ব্যক্তি এসব ঘটনার কিছুই মনে রাখতে পারেন না, এমনকি অপরাধীকেও শনাক্ত করতে পারেন না।
অপরাধ বিশ্লেষকদের মতে, চক্রের সদস্য সংখ্যা খুব বেশি না হলেও তারা অত্যন্ত কৌশলী এবং সংগঠিত। একজন সদস্য ধরা পড়লে বাকিদের চিহ্নিত করাও সম্ভব। তাই পুলিশের তৎপরতা ও জনসচেতনতাই হতে পারে প্রতিরোধের মূল কৌশল।
বিশেষজ্ঞরা জনবহুল এলাকায় মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন। অপরিচিত কারও কাছ থেকে কিছু না নেওয়া এবং সন্দেহজনক কিছু দেখলে দ্রুত পুলিশকে জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে। পশুর হাটগুলোতে পর্যাপ্ত সিসিটিভি ও স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েনের কথাও বলা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদাপোশাকেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। প্রতিটি হাটেই সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। সন্দেহজনক কাউকে দেখলে তাৎক্ষণিকভাবে কাছের পুলিশ সদস্যের সাহায্য নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।