কাশ্মীরে বন্দুক হামলার প্রেক্ষাপটে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার মধ্যে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার জাতিসংঘ সদরদপ্তরে প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠকে দ্বন্দ্বের শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং সংলাপের ওপর জোর দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব খালেদ মোহাম্মদ খিয়ারি, যিনি মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের রাজনৈতিক ও শান্তিরক্ষা কার্যক্রম তদারকি করেন। তিনি পরিস্থিতিকে উত্তেজনাপূর্ণ হিসেবে বর্ণনা করেন এবং বলেন, “বৈঠকে দ্বন্দ্ব নিরসনে শান্তিপূর্ণ সমাধান ও সংলাপের গুরুত্ব পুনরায় তুলে ধরা হয়েছে।”
তবে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এএনআই জানিয়েছে, বৈঠকে পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বার সম্ভাব্য সংশ্লিষ্টতা গুরুতরভাবে উত্থাপন করা হয়।
১৫ সদস্যবিশিষ্ট নিরাপত্তা পরিষদের এই সভা শেষে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি প্রকাশ করা হয়নি। তবে পাকিস্তান দাবি করেছে, তাদের বেশিরভাগ কূটনৈতিক উদ্দেশ্য এতে পূরণ হয়েছে। সভায় নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী দেশ এবং দশটি অস্থায়ী দেশের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনা উচিত। ভারত ও পাকিস্তানকে সামরিক সংঘর্ষ এড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “ভুল করবেন না—সামরিক সংঘর্ষ কোনো সমাধান নয়। আমি শান্তি প্রতিষ্ঠায় দুই দেশের সরকারকেই সহায়তা দিতে প্রস্তুত।”
এই বৈঠক আহ্বান করে নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য দেশ পাকিস্তান। সভায় পাকিস্তানের সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা এবং পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের বিষয়ে তাদের বক্তব্য নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘের বিভিন্ন সদস্য রাষ্ট্র। এএনআই জানায়, পাকিস্তানের ‘ফলস ফ্ল্যাগ’ দাবি বৈঠকে প্রত্যাখ্যাত হয় এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলো দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পরামর্শ দেয়।
বৈঠক শেষে জাতিসংঘে নিযুক্ত পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি আসিম ইফতিখার বলেন, “পেহেলগাম হামলায় পাকিস্তানের জড়িত থাকার অভিযোগ সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করছে আমাদের দেশ।”
তিনি ভারত কর্তৃক সিন্ধু নদ পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করাকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলেও অভিহিত করেন। দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, “কাশ্মীরি জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া এই সংকটের স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।”