চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কলার ঝুপড়ির পেছনের পাহাড়ি ঝিরি ধরে ঘণ্টাখানেক হাঁটলেই দেখা মেলে চালন্দা গিরিপথের। চবির শিক্ষার্থীদের কাছে এটি একটি কৌতূহলোদ্দীপক জায়গা। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রায় সবাই অন্তত একবার এই গিরিপথে ঘুরে আসে।
চালন্দা নামকরণের পেছনে রয়েছে একটি ইতিহাস। ২০১১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ভ্রমণপিপাসু শিক্ষার্থী গিরিপথটি ‘আবিষ্কার’ করেন, যদিও স্থানীয়রা আগেই এটি সম্পর্কে জানত। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের সঙ্গে মিল রেখে ‘নালন্দা’র ন-এর স্থানে চবির ‘চ’ বসিয়ে ‘চালন্দা’ নামকরণ করা হয়। এরপর থেকে এটি ‘চালন্দা গিরিপথ’ নামেই পরিচিত।
প্রথমবার গিয়েছিলাম প্রথম বর্ষে। এরপর চতুর্থ বর্ষে উঠে আবারও সেই এডভেঞ্চারের টানে ফিরে যাওয়া। সকাল ৭টা ৩০ মিনিটের একটু পর হাঁটা শুরু করি। ঝিরিপথ ধরে এগোতে থাকি। অল্প পানি, কিন্তু ছন্দময় গতিতে বয়ে চলা। নিচে বালুর কারণে হাঁটা বেশ আরামদায়ক। চারপাশে পাহাড়, সবুজ বন, কোনো লোকালয় নেই। মাঝেমধ্যে চোখে পড়ে সবজি চাষের ক্ষেত ও নানা ফলের গাছ। পথে সহযাত্রী আল-আমিন ভাই ও তামিমের সঙ্গে চলতে চলতে গল্পে মেতে উঠি।
পাহাড়ি ঝিরির পাশে পাওয়া যায় বিশুদ্ধ পানির ধারা, স্থানীয় কৃষকেরা প্রকৃতির গ্লাস বানিয়ে রেখেছেন। পাহাড়ি গা বেয়ে নেমে আসা সেই ঠান্ডা পানির স্বাদ অনন্য। রাস্তায় জারুল ফুল, নাম না জানা বুনো ফুল, অপরিচিত গাছপালা যেন প্রকৃতির মোহময় আলিঙ্গন।
হাঁটতে হাঁটতে যখন গিরিপথের মুখে পৌঁছালাম, তখন শরীরে এক ধরণের ছমছমে অনুভূতি। বাইরে তীব্র রোদ থাকলেও ভেতরটা ঠান্ডা—প্রাকৃতিক এসি যেন! পাহাড়ের ফাঁক দিয়ে আসা আবছা আলোয় সৃষ্টি হয় মায়াবী পরিবেশ। সরু পথে পা ভিজে যায় শীতল পানিতে। কিন্তু সাবধান হতে হয়, কারণ পিচ্ছিল গিরিপথ, নিচে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই, জোঁক, সাপ, বাদুড়, বুনো কাঁটা—সবকিছুর মধ্যেই এগিয়ে যেতে হয়। আমিও একবার পায়ে আঘাত পেয়েছিলাম। তবুও থেমে থাকিনি।
২০ মিনিটের মতো গিরিপথ পেরিয়ে উঠে এলাম এক উঁচু পাহাড়ে। চারদিকে শুধু সবুজ আর সবুজ, নেই কোনো মানুষের চিহ্ন। বাতাসে শিমুলের তুলা উড়ে বেড়ায়—এই ভিন্ন এক জগৎ যেন।
শেষে আবার ঝিরিপথ ধরে ফিরে এলাম। মনটা তখনও পাহাড়েই পড়ে আছে। জীবনের অনিশ্চয়তার মাঝে মাঝে নিজেকে আনন্দ দেওয়ার এই মুহূর্তগুলোই একদিন হয়ে থাকবে অমূল্য স্মৃতি। চালন্দা গিরিপথ সত্যিই একটি দুঃসাহসিক এবং মনে রাখার মতো অভিজ্ঞতা।