দীর্ঘ ১১ সপ্তাহের সম্পূর্ণ অবরোধের পর অবশেষে গাজা উপত্যকায় ত্রাণ প্রবেশ করেছে। সোমবার (২০ মে) কেরেম শালোম ক্রসিং দিয়ে জাতিসংঘের নয়টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করে। মঙ্গলবার জাতিসংঘের ত্রাণবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচারের বরাত দিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
জাতিসংঘ এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও জানিয়েছে, গাজায় প্রবেশ করা ত্রাণ অত্যন্ত সীমিত এবং তা বাস্তব প্রয়োজনের তুলনায় ‘সমুদ্রে এক ফোঁটা জল’। টম ফ্লেচার বলেন, “২১ লাখ মানুষের এই বিপর্যস্ত ভূখণ্ডে মাত্র নয়টি ট্রাক কোনোভাবেই যথেষ্ট নয়। এর তুলনায় পূর্বে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ ট্রাক প্রবেশ করত।”
গত ৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি আগ্রাসনে ধ্বংসস্তূপে পরিণত গাজা উপত্যকা বর্তমানে ভয়াবহ মানবিক সংকটে। ২ মার্চ থেকে পুরোপুরি অবরুদ্ধ গাজায় খাদ্য, পানি ও ওষুধের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে অনাহারকে ব্যবহার করার অভিযোগও উঠেছে।
জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টেফান ডুজারিক বলেন, “এই ত্রাণ আমাদের নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে, কিন্তু মাত্র নয়টি ট্রাক কোনোভাবেই গাজার জন্য যথেষ্ট নয়। এই বার্তা আমরা ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষকে বারবার জানিয়ে আসছি।”
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিজেই গতকাল স্বীকার করেন, আন্তর্জাতিক চাপের কারণে সীমিতভাবে ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তার কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী স্বল্প পরিসরে ত্রাণ প্রবেশের প্রস্তাব দিয়েছে, যা গ্রহণ করা হয়েছে।
ফিলিস্তিনি অঞ্চলে বর্ধিত ইসরায়েলি স্থল অভিযানে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে প্রাণ হারিয়েছেন আরও অন্তত ১৫০ জন। গাজার এই মানবিক বিপর্যয়ের প্রেক্ষিতে পশ্চিমা বিশ্বের একাধিক দেশ—বিশেষ করে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও কানাডা—ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
এক যৌথ বিবৃতিতে ২২টি দাতা দেশ, যার মধ্যে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান, যুক্তরাজ্য, সুইডেনসহ অনেক দেশ রয়েছে, গাজায় অবিলম্বে পূর্ণমাত্রায় ত্রাণ প্রবেশ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে। তারা জানায়, “সীমিত সহায়তা শুরু হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। জরুরি সহায়তা দ্রুত ও ব্যাপকভাবে সরবরাহ করতে হবে।”
গাজার মানবিক পরিস্থিতি দিন দিন আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। আন্তর্জাতিক সমাজের আহ্বান থাকলেও ত্রাণ প্রবেশের এই স্বল্প মাত্রা ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা নিরসনে যথেষ্ট নয়, বলে আশঙ্কা করছেন মানবাধিকারকর্মীরা।