দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়কালে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও সরকারি কর্মকর্তাদের বিপুল পরিমাণ সম্পদ জব্দ করেছে। এই আট মাসে আদালতের আদেশে মোট ৭৪টি জব্দাদেশ কার্যকর হয়েছে।
জব্দ হওয়া সম্পদের মধ্যে রয়েছে প্রায় ১৯২ একর জমি, ২৮টি ভবন, ৩৮টি ফ্ল্যাট, ১৫টি প্লট, ২৩টি গাড়ি এবং তিনটি জাহাজ। এসব দেশি-বিদেশি সম্পদের আর্থিক মূল্য প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।
২০২৩ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই দুদক সক্রিয় ভূমিকা পালন শুরু করে। এর আগে সংস্থাটির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ ছিল। নতুন নেতৃত্বে দুদক নিয়মিত সম্পদ জব্দের আবেদন করে যাচ্ছে এবং আদালত তা অনুমোদন দিচ্ছে।
জব্দ হওয়া সম্পদের তালিকায় রয়েছেন শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্য—পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়, কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা এবং তার সন্তানরা। এছাড়াও সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন তাজুল ইসলাম, নসরুল হামিদ, জুনায়েদ আহমেদ পলক, এনামুর রহমান, মির্জা আজম এবং উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
একটি আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্স জানিয়েছে, শেখ হাসিনার পরিবারের এবং ১০টি শিল্পগোষ্ঠীর মোট ১৭ হাজার কোটি টাকার শেয়ার এবং ৪ হাজার কোটি টাকার ব্যাংক অর্থ জব্দ করা হয়েছে। ৮৪ জন ব্যক্তির বিদেশগমনেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
সরকারি কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও জব্দের নজির রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে রাজউকের সাবেক সহকারী পরিচালক শামসুল আলম মিলকীর উত্তরার আটতলা বাড়িটি উল্লেখযোগ্য। ওই ভবন থেকে প্রতি মাসে আড়াই লাখ টাকা ভাড়া উঠছে, যা দুদক সরাসরি সংগ্রহ করছে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে কেবল বিরোধী পক্ষ নয়, ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধেও সমানতালে ব্যবস্থা নিতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “আইনি প্রক্রিয়া দীর্ঘ হলেও জব্দকৃত সম্পদ শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রের অনুকূলে যাবে।” দুদক সংস্কার কমিশন প্রস্তাব করেছে, জব্দকৃত সম্পদের ১০% কমিশনকে দেওয়া হোক, যাতে সংস্থাটির কার্যক্রমে গতি আসে।