সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী এবং ফরিদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে প্রায় ৯৯ কোটি টাকার অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক আর্থিক লেনদেনের অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গতকাল রবিবার (১ জুন) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন।
দুদকের দায়ের করা এজাহারে বলা হয়েছে, খন্দকার মোশাররফ হোসেন জ্ঞাত আয়ের বাইরে আরও ৩৫ কোটি ১৮ লাখ টাকার বেশি সম্পদ অর্জন করেছেন। একই সঙ্গে তার নামে থাকা ১৫টি ব্যাংক হিসাবে মোট ৯৯ কোটি ২১ লাখ টাকা এবং ১১ লাখ ৩৩ হাজার মার্কিন ডলারের লেনদেন হয়েছে, যা দুদকের মতে অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক।
এদিকে, খন্দকার মোশাররফ হোসেনের প্রকৃত আয় দেখানো হয়েছে মাত্র ৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকা, যা অর্জিত সম্পদের তুলনায় অনেক কম। এসব তথ্যের ভিত্তিতে দুদক তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের বিভিন্ন ধারায় মামলা করেছে।
সরকার পরিবর্তনের পর মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে দুদক। এর অংশ হিসেবে গত ৪ ফেব্রুয়ারি আদালতের আদেশে তার বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
উল্লেখ্য, খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ছেলে খন্দকার মাশরুর হোসেন মিতু, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের সাবেক স্বামী। এই পারিবারিক সম্পর্ক ও তার জটিলতা রাজনৈতিক অঙ্গনে মোশাররফের অবস্থানে প্রভাব ফেলেছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
২০২২ সালের ডিসেম্বরে তাকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে বাদ দেওয়া হয় এবং সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির পদ থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর থেকেই তিনি দেশের বাইরে অবস্থান করছেন।
এছাড়া, ২০২৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মোশাররফ হোসেন, তার ভাই খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবরসহ আরও ১৫ জনের বিরুদ্ধে ফরিদপুরে এক হত্যাচেষ্টার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়।
২০০৯ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে তিনি প্রথমে শ্রম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। পরে তাকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে এবং ২০১৫ সালে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে ২০১৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে আসার পর তাকে আর মন্ত্রিসভায় রাখা হয়নি।