বিয়ে মানেই দুটি ভিন্ন পরিবারের মধ্যে নতুন এক বন্ধনের সূচনা। কিন্তু এই নতুন সম্পর্ক কখনো কখনো মতবিরোধ বা দ্বন্দ্বের জন্ম দেয়, বিশেষ করে মা ও পুত্রবধূর মধ্যে। এ ধরনের দ্বন্দ্ব শুধু পরিবারে অশান্তি নয়, স্বামীর ওপরেও ফেলে তীব্র মানসিক চাপ। এই চাপ সামলে সম্পর্ক বজায় রাখতে একজন স্বামীর জন্য দরকার সচেতনতা, ভারসাম্য ও সহানুভূতির।
পক্ষপাত নয়, ভারসাম্য বজায় রাখুন
মায়ের কিংবা স্ত্রীর পক্ষ নেওয়া মানেই আরেকজনের কাছে অবহেলিত হওয়ার অনুভব তৈরি হওয়া। এক পক্ষকে গুরুত্ব দিলে পারিবারিক শান্তি নষ্ট হয়। তাই একজন স্বামীর উচিত দুটি পক্ষের দৃষ্টিভঙ্গি বোঝা এবং কোনো পক্ষপাত না করে সমতা রক্ষা করা।
খোলামেলা অনুভূতি প্রকাশ করুন
মা ও স্ত্রী উভয়ের সঙ্গেই নিজের ভালোবাসা ও আবেগ প্রকাশ করুন। তাদের বুঝিয়ে দিন যে তারা দুজনেই আপনার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে দরকার খোলামেলা ও স্পষ্ট যোগাযোগ।
দু’পক্ষের কথা মন দিয়ে শুনুন
যদি মা বা স্ত্রী কোনো অভিযোগ জানান, সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে মনোযোগ দিয়ে শুনুন। কারণ, প্রতিটি অভিযোগের পেছনে লুকিয়ে থাকে আবেগ ও উপলব্ধি। সেটি অনুধাবন করতে পারলে সমাধান সহজ হয়।
ব্যক্তিগত বিষয় ব্যক্তিগত রাখুন
স্ত্রী বা মায়ের সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপ অন্য পক্ষের কাছে নেতিবাচকভাবে প্রকাশ করা ঠিক নয়। এতে ভুল বোঝাবুঝি আরও বাড়ে। দুজনের সঙ্গেই আলাদা যোগাযোগ রাখুন, গোপনীয়তা বজায় রেখে।
দৃষ্টিভঙ্গির সেতুবন্ধন গড়ুন
স্বামী হিসেবে একজন মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করুন। মা কেন কিছু বলছেন বা স্ত্রী কেন এমন আচরণ করছেন, তা যৌক্তিকভাবে ব্যাখ্যা করুন। এতে করে ভুল বোঝাবুঝি অনেকটাই কমে যায়।
সময় ভাগ করে নিন
মা ও স্ত্রী—দুজনেরই সময়, যত্ন ও উপস্থিতি প্রয়োজন। কেউ অবহেলিত মনে না করে, সেভাবে সময় ভাগ করুন। মা যেন অনুভব করেন ছেলে আগের মতোই আছে, আর স্ত্রী যেন পায় মানসিক আশ্রয়।
আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখুন
এই দ্বন্দ্বের কারণে অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন বা ক্ষিপ্ত হন। আবেগ সামলানো জরুরি। নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখুন, প্রয়োজন হলে পরামর্শ নিন।
দাম্পত্য সম্পর্ক দৃঢ় করুন
স্ত্রীর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুললে, তিনি স্বাভাবিকভাবেই শাশুড়িকে সম্মান করবেন। স্বামী-স্ত্রীর বোঝাপড়া ভালো হলে পুরো পরিবারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
কাউন্সেলিংয়ে যেতে দ্বিধা নয়
যদি পরিস্থিতি জটিল হয়ে যায়, তবে পারিবারিক কাউন্সেলিং নিতে পারেন। একজন থেরাপিস্ট সংবেদনশীল বিষয়গুলো বুঝে সহানুভূতির সঙ্গে সমাধানে সাহায্য করতে পারেন।
শেষ কথা
মা-বউয়ের দ্বন্দ্ব খুব সাধারণ, কিন্তু তা অবহেলা করলে পরিবারে দীর্ঘস্থায়ী অশান্তি তৈরি হতে পারে। একজন সচেতন, বিচক্ষণ ও সহানুভূতিশীল স্বামীই পারেন পরিবারে শান্তি ফিরিয়ে আনতে।