Ridge Bangla

রাউজানে দীর্ঘদিনের সহিংসতা ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব

বন্দর নগরী চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতা নতুন মাত্রা পেয়েছে। ১৯ এপ্রিল রাতে বাগোয়ান ইউনিয়নের গরিব উল্লাহ পাড়ায় যুবদল কর্মী মানিক আবদুল্লাহকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি প্রতিবেশীর বাড়িতে রাতের খাবার খাচ্ছিলেন, এ সময় চার–পাঁচজন অস্ত্রধারী ঘরে ঢুকে তাঁকে গুলি করে। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

মাত্র তিন দিন পর, ২২ এপ্রিল রাউজান সদর ইউনিয়নের গাজীপাড়ায় যুবদলের আরেক কর্মী মুহাম্মদ ইব্রাহিমকে স্থানীয় চায়ের দোকানে বসে থাকা অবস্থায় গুলি করে হত্যা করা হয়। এই দুটি ঘটনা এলাকায় রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দেয়।

২০২৪ সালের আগস্টে সরকারের পতনের পর থেকে রাউজানে অন্তত ১২টি খুনের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে সাতজন সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

রাউজানের রাজনৈতিক সহিংসতার ইতিহাস চার দশকের পুরনো। আশির দশকের মাঝামাঝি বিএনপির সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের আবদুল্লাহ আল হারুনের অনুসারীদের মধ্যে বিরোধ থেকে শুরু হয় সহিংসতা। এ দ্বন্দ্ব অস্ত্র ও আতঙ্কের মাধ্যমে দমননীতিতে রূপ নেয়।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর সংসদ সদস্য ফজলে করিম চৌধুরী রাউজানে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন। স্থানীয় সূত্র জানায়, তাঁর সময় সশস্ত্র একটি দল গড়ে ওঠে যারা নির্বাচনসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করত এবং বিরোধীদের দমন করত।

সরকার পরিবর্তনের পর বিএনপির নেতাকর্মীরা রাউজানে পুনরায় সক্রিয় হন। তবে দলের মধ্যেই গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও গোলাম আকবর খন্দকারের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, যার ফলে আরও খুন-হামলার ঘটনা ঘটে।

রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ছাড়াও রাউজান অর্থনৈতিক স্বার্থের সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দু। কর্ণফুলী নদীঘেঁষা ব্যবসা, বালু-মাটির ঠিকাদারি, অবৈধ কাঠ ও মদ চোরাচালান, এমনকি অস্ত্র পাচার—সব কিছু মিলে রাউজান একটি কৌশলগত এলাকা হয়ে উঠেছে। এইসব নিয়ন্ত্রণ নিয়েই সহিংসতার বিস্তার ঘটছে।

প্রচলিত অভিযোগ—রাউজানে বহু আলোচিত খুনের বিচার হয়নি। ১৯৮৯ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত একাধিক রাজনৈতিক খুনের মামলায় অনেক আসামি খালাস পেয়ে যান। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে অপরাধীরা আইনের আওতার বাইরে থেকে যায়, যার ফলে জনগণের আইনের প্রতি আস্থা কমে যাচ্ছে।

বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরকে দোষারোপ করলেও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। তদন্তের আশ্বাস এলেও বাস্তবে সহিংসতার চক্র চলছে অনবরত। এলাকাবাসীর মতে, রাজনৈতিক জবাবদিহিতা ও কার্যকর আইন প্রয়োগ ছাড়া এই চক্র থেকে মুক্তি সম্ভব নয়।

আরো পড়ুন