ঢাকার একটি অভিজাত আবাসিক এলাকায় জমি ও ফ্ল্যাট কিনেছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী মো. রাশেদুল আলম। একইসঙ্গে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছেন প্রায় চার কোটি টাকা এবং প্রায় সোয়া কোটি টাকার এফডিআর রয়েছে তাঁর নামে।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, রাশেদুলের স্ত্রী অপর্ণা রানী দাস, যিনি একটি কলেজের শিক্ষক, তাঁর নামেও কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। দুদকের ভাষ্যমতে, এসব সম্পদের মূল উৎস ঘুষের অর্থ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) রাশেদুল ও অপর্ণার ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়ার পর দুদক তদন্ত শুরু করে। অনুসন্ধানে প্রায় ২২ কোটি ৮০ লাখ টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। দুদকের সহকারী পরিচালক মো. সাজিদ-উর-রোমান এই দম্পতির বিরুদ্ধে মামলা করার সুপারিশ করেছেন।
তদন্তে জানা গেছে, ২০১৮ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে রাশেদুল বিপুল সম্পদের মালিক হন। ২০২৩ সালের মে মাসে ছুটি নিয়ে তিনি বিদেশে চলে যান এবং বর্তমানে পরিবারসহ নিউজিল্যান্ডে অবস্থান করছেন।
রাশেদুলের নামে তিনটি ব্যাংক হিসাব ও তিনটি এফডিআর হিসাব রয়েছে। বেতন জমা হতো সোনালী ব্যাংকের একটি একাউন্টে, তবে অন্যান্য একাউন্টে ঘুষের লেনদেনের তথ্য মিলেছে। শেলটেক ব্রোকারেজ লিমিটেডে তাঁর নামে থাকা বিও একাউন্টের মাধ্যমে প্রায় চার কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, অনুসন্ধান চলাকালে তাঁদের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ এবং ঢাকার প্লট ও কুমিল্লার হোমনার জমি জব্দ করা হয়েছে।
রাশেদুলের বিলাসবহুল জীবনধারার তথ্যও মিলেছে। জানা গেছে, তিনি দেড় লাখ টাকার ঘড়ি পরতেন এবং পাঁচ তারকা হোটেলে নিয়মিত বিলাসী জীবন যাপন করতেন। এসব হোটেলে তাঁর নামে রয়েছে লাখ লাখ টাকার বিল। ঢাকার অভিজাত বিপণিবিতান থেকে চারটি দামি ঘড়ি কেনার তথ্যও পাওয়া গেছে।
২০১৬-১৭ করবর্ষ থেকে ২০২৩-২৪ করবর্ষ পর্যন্ত তাঁর মোট বেতন আয় ছিল প্রায় ৩২ লাখ টাকা। যদিও বিভিন্ন উৎসের কিছু আয় দেখানো হয়েছে, প্রকৃত সম্পদের পরিমাণ আয়ের তুলনায় অনেক বেশি।
অন্যদিকে, অপর্ণা রানী দাস ২০১৭ সালে বিসিএস (শিক্ষা ক্যাডার) পাস করে শিক্ষকতার পেশায় যোগ দেন। তাঁর নামে রয়েছে প্রায় ৯২ লাখ টাকার সম্পদ, যার মধ্যে ব্যাংক জমা ও নগদ টাকা উল্লেখযোগ্য। তাঁর বৈধ আয় পাওয়া গেছে মাত্র ৩৩ লাখ টাকার মতো, বাকির উৎস অজানা।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “এত বিপুল সম্পদের মালিক হওয়া স্বাভাবিক নয়, এটি দুর্নীতিরই ফসল।” তিনি আরও বলেন, প্রকৌশল অধিদপ্তরের অন্য কর্মকর্তা, ঠিকাদার এবং রাজনৈতিক নেতাদের সংশ্লিষ্টতার সম্ভাবনাও রয়েছে, তাই সবার বিরুদ্ধে সঠিক তদন্ত ও ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। দুদক জানিয়েছে, আইন অনুযায়ী যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।