সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় হরিণ শিকার এখন রীতিমতো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জ এবং পশ্চিম সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে সংঘবদ্ধ শিকারি চক্র নির্বিচারে হরিণ শিকার করছে। এসব চক্রের পেছনে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের সহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে।
যদিও মাঝে মাঝে কোস্ট গার্ড ও বন বিভাগের অভিযানে কিছু শিকারি আটক হচ্ছে, তবুও বেশিরভাগই পার পেয়ে যাচ্ছে। কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন (মোংলা) জানিয়েছে, গত এক মাসে তারা ৪২৩ কেজি হরিণের মাংস, ৮০টি ফাঁদ ও সাতজন শিকারিকে আটক করেছে। তবুও হরিণ শিকারে তেমন কোনো হ্রাস দেখা যাচ্ছে না।
১২ মার্চ মরালক্ষ্মী খালের পাশে চালানো অভিযানে ২৫ কেজি মাংস ও ৮০টি ফাঁদসহ খুলনার কয়রা উপজেলার পাঁচজন ধরা পড়ে। ১৩ মার্চ নলিয়ান এলাকায় ২৮ কেজি মাংসসহ ধরা পড়ে ইয়াসিন গাজী। ১৬ মার্চ কয়রা, কৈখালী ও হাড়বাড়িয়া এলাকায় পৃথক তিনটি অভিযানে ২০৫ কেজি মাংস, দুটি হরিণের মাথা ও চামড়াসহ ধরা হয় বাবু আলমকে। এরপর ৮ এপ্রিল নলিয়ান থেকে ১১০ কেজি মাংসসহ ধরা হয় আরিফুল শেখকে। ১১ ও ১৭ এপ্রিল মোংলার জয়মনিরঘোল এলাকায় উদ্ধার হয় হরিণের চামড়া ও মোট ৫৫ কেজি মাংস।
স্থানীয় জেলেরা জানিয়েছেন, শিকারিরা গভীর বনে ফাঁদ পেতে হরিণ ধরে এবং এ বিষয়ে মুখ খুললে হুমকির মুখে পড়তে হয়। এমনকি কাঁকড়াশিকারিরাও এখন টোপ তৈরিতে হরিণের মাংস ব্যবহার করছে।
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ জানিয়েছেন, বন বিভাগের নিয়মিত টহল চলছে এবং শিকারিরা আটকের ঘটনাও ঘটছে। তবে তিনি জানান, হরিণ শিকার ঠেকাতে আইন আরও কঠোর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শরণখোলার সোনাতলা, পানিরঘাট, রাজাপুর, রসুলপুর, মোরেলগঞ্জের জিউধরা, পাথরঘাটার চরদুয়ানী এবং গ্যানপাড়া এলাকার শিকারিরা জেলের ছদ্মবেশে বনে প্রবেশ করে হরিণ শিকার করছে। এছাড়া রামপাল ও সাতক্ষীরার জেলেরা কাঁকড়ার টোপ তৈরিতে নিয়মিত হরিণ হত্যা করছে। সুপতি, দুবলা, কটকা, কচিখালী, বাদামতলা, চান্দেশ্বর, টিয়ারচর, কোকিলমুনি ও আন্ধারমানিক এলাকাতেও ফাঁদ পেতে হরিণ ধরা হচ্ছে।
প্রতি কেজি হরিণের মাংস ৮০০ থেকে ১,০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা দেশের বিভিন্ন শহর, বিশেষ করে ঢাকায় পাচার করা হয়। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, রাসমেলার সময় তীর্থযাত্রীর ছদ্মবেশে শিকারিরা বনে ঢুকে সবচেয়ে বেশি হরিণ শিকার করে।
সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, “কোস্ট গার্ডের অভিযান কিছুটা কার্যকর হলেও বন বিভাগের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহযোগিতায় শিকারি চক্রের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা রুখতে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া এবং হরিণ শিকার ঠেকাতে কঠোর আইন প্রণয়ন জরুরি।”