চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা ও ধনাগোদা নদীর প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে ১০ কিলোমিটার এলাকা রয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের আওতায় এবং মেঘনা নদীর পশ্চিম পাড়ে অতিরিক্ত ৫ কিলোমিটার এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। স্থানীয়দের আশঙ্কা, ভাঙন অব্যাহত থাকলে একসময় পুরো বাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। ফলে এলাকাবাসীর মধ্যে চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।
সরেজমিনে জানা গেছে, মেঘনা ও ধনাগোদা নদীর পাড় ঘেঁষে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও প্রবল স্রোতের ফলে জহিরাবাদ লঞ্চঘাট থেকে সোনারপাড়া-সানকিভাঙ্গা, চরমাছুয়া-জনতা বাজার, ধনাগোদা নদীর ষাটনল থেকে কালীপুর, নবীপুর, হাফানিয়া, খাগুরিয়া, ঠেটালিয়া ও সিপাইকান্দি পর্যন্ত নদীতীর জুড়ে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি মেঘনা নদীর পশ্চিম পাড়ের চরাঞ্চল বোরচর, চরউমেদ ও নাছিরারচর এলাকাও ভাঙনের কবলে পড়েছে।
এই ভাঙনের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প, হাজার হাজার একর ফসলি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাজার, হাসপাতাল, মসজিদ, মাদ্রাসা ও বহু বসতভিটা। নদীতীরবর্তী মানুষজন দিন কাটাচ্ছেন আতঙ্কের মধ্যে। হঠাৎ শুরু হওয়া এই ভাঙনে ইতোমধ্যে অনেক ঘরবাড়ি ও জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। জরুরি প্রতিরোধ ব্যবস্থা না নিলে ক্ষতির মাত্রা আরও বাড়তে পারে।
জানা গেছে, ১৯৮৬-৮৭ সালে নির্মিত ৬৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেচ প্রকল্পের মূল বাঁধ অতীতে দুইবার ভেঙে গিয়ে বড় ধরনের ক্ষতির সৃষ্টি করেছিল। পরে পুনরায় মেরামত করে বাঁধটি সচল রাখা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণেই নদীর পাড়ে ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। কালিপুর বাজার এলাকার ফারুক হোসেন ও ইয়াকুব আলী জানান, আকস্মিক ভাঙনে বাজার, কালিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র, হাসপাতালসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হুমকিতে পড়েছে।
সিপাইকান্দি ইউপি সদস্য গোলাম নবী খোকন জানান, ধনাগোদা নদীর তীরবর্তী দেড় কিলোমিটার ভাঙনপ্রবণ এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ফেলা ও ব্লক নির্মাণ কাজ শুরু করেছে। ষাটনল ইউপি চেয়ারম্যান ফেরদাউস আলম জানান, অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে ষাটনল ও কালিপুর এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। বালু মহলের নামে যেসব ইজারা দেওয়া হয়েছে, সেগুলো বন্ধ করা না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।
উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও খাগুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা মিয়া মঞ্জুর আমীন স্বপন জানান, ধনাগোদা নদীর ভাঙনে খাগুরিয়া, হাফানিয়া ও নবীপুর এলাকার বহু মানুষ জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পও এখন ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।
সেচ প্রকল্পের পানি ব্যবহারকারী ফেডারেশনের সভাপতি রাসেল ফয়েজ আহমেদ চৌধুরী শহীন বলেন, অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে দেশের অন্যতম বৃহৎ সেচ প্রকল্প এখন হুমকির মুখে। নদীতীরবর্তী এলাকায় ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বহু পরিবার ও ফসলি জমি।
এ বিষয়ে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সেলিম শাহেদ জানান, ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে তাৎক্ষণিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে নদীর তীর ও সেচ প্রকল্প রক্ষায় বালু উত্তোলন বন্ধ করতে দ্রুত লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ জানানো হবে।
মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, নদীভাঙনের বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে এবং অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে। সেচ প্রকল্প রক্ষা ও নদীভাঙন ঠেকাতে এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।