Ridge Bangla

তারেক রহমানকে নিয়ে ‘দ্য উইক’-এর কাভার স্টোরি: ‘নিয়তির সন্তান’

ভারতের জনপ্রিয় সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘দ্য উইক’ তাদের সাম্প্রতিক সংখ্যার প্রধান প্রতিবেদনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে একটি কাভার স্টোরি প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল “Destiny’s Child”, যার বাংলা অর্থ ‘নিয়তির সন্তান’।

নয়াদিল্লি ব্যুরো চিফ নম্রতা বিজি আহুজার লেখায় উল্লেখ করা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের বিএনপি ভাঙার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তারেক রহমানের নেতৃত্বে দলটি ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তারেক রহমান ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছেন এবং তিনি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে এগোচ্ছেন।

প্রতিবেদনে তারেক রহমানের রাজনৈতিক জীবন ও পারিবারিক পটভূমি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমান। ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর বিএনপির নেতৃত্ব গ্রহণ করেন খালেদা জিয়া। পরবর্তীতে, ১৯৯০ সালে সামরিক শাসক এরশাদের পতনে ভূমিকা রাখেন খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা।

বর্তমানে ৫৭ বছর বয়সী তারেক রহমান তার মায়ের আদর্শ অনুসরণ করে দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বিএনপি আবারও দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার চেষ্টা করছে। বর্তমানে তিনি লন্ডনে অবস্থান করলেও দলীয় কার্যক্রমে ভার্চুয়ালি সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। ঢাকায় তার প্রত্যাবর্তন নিয়ে দলের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে।

তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন জানান, তারেক ইতিমধ্যে একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছেন। আরেক উপদেষ্টা, বিশ্বব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার, জানান, তারেক একটি জ্ঞানভিত্তিক, উন্নয়নকেন্দ্রিক এবং দুর্নীতিমুক্ত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে কাজ করছেন। তার লক্ষ্য সমাজের সকল শ্রেণির জন্য সমান সুযোগ ও ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষক আসিফ বিন আলী বলেন, দীর্ঘ নির্বাসনকালে তারেক রহমান অনেক ব্যক্তিগত ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, হারিয়েছেন ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোকে এবং নানা আইনি ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্যেও বিএনপিতে প্রভাব ধরে রেখেছেন। আসিফের মতে, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দল ভাঙার প্রচেষ্টা চললেও তারেক ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন।

২০০৯ সালে বিএনপির পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে তারেক সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং ২০১৬ সালে পুনরায় নির্বাচিত হন। পরে, মা খালেদা জিয়ার কারাবরণের পর তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। আসিফ বিন আলীর মতে, তারেক রহমানের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি বাংলাদেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে রয়েছেন।

তারেক রহমান ১৯৮৮ সালে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন এবং ১৯৯১ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির নিরঙ্কুশ বিজয়ের পেছনেও ছিল তার সক্রিয় ভূমিকা। তবে পরবর্তীকালে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে, যদিও তখন তিনি সরকারে কোনো আনুষ্ঠানিক পদে ছিলেন না। ২০০৭ সালে সামরিক সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর তারেক ও তার মা খালেদা জিয়া গ্রেফতার হন। দুই বছরের তত্ত্বাবধায়ক শাসনকালে বহু রাজনীতিবিদ গ্রেফতার হন ও নির্যাতনের শিকার হন। পরে ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে তারেক মুক্তি পান এবং চিকিৎসার জন্য লন্ডনে পাড়ি জমান।

‘দ্য উইক’ বলছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিবর্তনের এই মুহূর্ত তারেক রহমানের জন্য নিজস্ব একটি উত্তরাধিকার গড়ে তোলার সুযোগ। এখন প্রশ্ন থেকে যায়, তারেক রহমান কেমন নেতা হয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নিজের স্থান নিশ্চিত করবেন?

আরো পড়ুন