ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার জেরে দুই দেশ একের পর এক পাল্টাপাল্টি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দিল্লি দ্রুত সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত, সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ, পাকিস্তানিদের ভিসা বাতিল ও কূটনীতিক বহিষ্কারের মতো পদক্ষেপ ঘোষণা করে। পাল্টা জবাবে পাকিস্তানও ভারতের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এর মধ্যে রয়েছে ভারতের জন্য আকাশসীমা বন্ধ, বাণিজ্য বন্ধ এবং সর্বশেষ ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা।
সিমলা চুক্তি কী?
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতও জড়িয়ে পড়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে। যুদ্ধে পাকিস্তানের পরাজয়ের পর ১৯৭২ সালের জুলাই মাসে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো ভারতের সিমলায় বৈঠকে বসেন। ওই বৈঠকে ঐতিহাসিক সিমলা চুক্তি সই হয়। চুক্তির মূল উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধ শেষ করে দুই দেশের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। এর ফলে ১৯৭১ সালের যুদ্ধে ধরা পড়া পাকিস্তানের প্রায় ৭৩ হাজার যুদ্ধবন্দি ভারতের হেফাজতে ছিল এবং ভারতের দখলে থাকা প্রায় ৫ হাজার বর্গমাইল জমির বিষয়ে সমঝোতা হয়।
চুক্তির প্রধান বিষয়গুলো ছিল:
-
দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা
-
কোনো পক্ষ একতরফা সিদ্ধান্ত নেবে না
-
নতুন নিয়ন্ত্রণরেখা গঠন এবং তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন
তবে বাস্তবে দুই দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে।
ভারতের ওপর কী প্রভাব পড়তে পারে?
পাকিস্তান যদি সিমলা চুক্তি স্থগিত করে, তবে ভারতের ওপর কিছু সম্ভাব্য প্রভাব পড়তে পারে:
-
দ্বিপক্ষীয় আলোচনার রাস্তায় ধাক্কা: চুক্তি ভেঙে গেলে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ভবিষ্যত আলোচনার পথ আরও কঠিন হবে।
-
কাশ্মীর ইস্যু আন্তর্জাতিক হওয়ার ঝুঁকি: চুক্তির অধীনে কাশ্মীর ইস্যু কেবল দ্বিপক্ষীয় ছিল। তা বাতিল হলে পাকিস্তান আন্তর্জাতিক মঞ্চে বিষয়টি তুলতে পারে, যা ভারত চায় না।
-
নিয়ন্ত্রণরেখায় অশান্তি: চুক্তির অধীনে নিয়ন্ত্রণরেখার প্রতি সম্মান দেখানো হচ্ছিল। সেটি বাতিল হলে সীমান্তে উত্তেজনা বাড়তে পারে।
-
কূটনৈতিক সম্পর্কের আরও অবনতি: দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দূরত্ব আরও বৃদ্ধি পাবে, কূটনৈতিক যোগাযোগ ন্যূনতমে নেমে আসতে পারে।
তবে ভারত মনে করে, জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা (অনুচ্ছেদ ৩৭০) বাতিল করা একান্তই ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং এটি সিমলা চুক্তির লঙ্ঘন নয়। অন্যদিকে পাকিস্তান এ সিদ্ধান্তকে চুক্তি লঙ্ঘন হিসেবে তুলে ধরছে।