জীবনের সব পর্যায়েই স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া জরুরি হলেও, গর্ভাবস্থায় এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সুষম খাবার সন্তানের সঠিক বৃদ্ধি ও বিকাশ নিশ্চিত করে এবং মায়ের শরীরও সুস্থ থাকে।
প্রথম তিন মাসে নারীরা খাবারে অরুচি, অনীহা, বমি ও মাথাব্যথাসহ নানা সমস্যায় ভোগেন। তবুও, খিদে কম থাকলেও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ আবশ্যক, যাতে ভ্রূণের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ও অন্যান্য পুষ্টি নিশ্চিত করা যায়।
মায়ের খাদ্যাভ্যাস সরাসরি সন্তানের স্বাভাবিক গঠনের সঙ্গে জড়িত। তাই গর্ভবতী মায়েদের দিনে তিনবার মূল খাবার ও দুইবার নাস্তা গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়।
খাদ্যতালিকায় যা থাকা উচিত
১. শর্করা জাতীয় খাবার
শক্তির প্রধান উৎস। বাদামি আটা ও গোটা শস্যজাতীয় খাবার বেছে নিতে হবে। ভাত ও রুটি অবশ্যই পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত।
২. সকালের নাস্তা
ভাজাপোড়া এড়িয়ে চলতে হবে। খেজুর, কাঠবাদাম, চিয়া সীড, মিষ্টি কুমড়ার বীজ ইত্যাদি খেতে হবে। কাঠবাদাম বিশেষভাবে পুষ্টিকর।
৩. খেজুর
বমির কারণে দুর্বলতা এড়াতে খেজুর দারুণ কার্যকর। এটি দ্রুত শক্তি জোগাতে সাহায্য করে।
৪. সবজি
গাজর, পালং শাক, মটরশুটি, টমেটো, মুলা, বাঁধাকপি, মিষ্টি আলু ইত্যাদি সবজি শরীরে ভিটামিন ও খনিজ সরবরাহ করে।
৫. ফল
কমলা, আম, কলা, আপেল, নাশপাতি, লেবু ইত্যাদি রঙিন ফল শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিন সরবরাহ করে।
৬. দুগ্ধজাত খাবার
প্রতিদিন দুধ, দই ইত্যাদি গ্রহণ করা উচিত। এগুলো ক্যালসিয়ামের চমৎকার উৎস।
৭. আয়োডিনযুক্ত লবণ ও সামুদ্রিক মাছ
শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশের জন্য আয়োডিন গুরুত্বপূর্ণ। তাই আয়োডিনযুক্ত লবণ ও সামুদ্রিক মাছ খাওয়া দরকার।
৮. ফলিক অ্যাসিড
ভ্রূণের নিউরাল টিউব ত্রুটি প্রতিরোধে ফলিক অ্যাসিড অপরিহার্য। গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে এটি অবশ্যই খাদ্যতালিকায় থাকা উচিত।
৯. আয়রন
রক্তের পরিমাণ বাড়াতে ও অক্সিজেন বহনে সহায়তা করে। আয়রনের ঘাটতি অ্যানিমিয়া তৈরি করতে পারে, যা মা ও শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
১০. ক্যালসিয়াম
ভ্রূণের দাঁত ও হাড়ের গঠনে এবং মায়ের হাড় শক্ত রাখতে ক্যালসিয়াম অপরিহার্য।
১১. প্রোটিন
ভ্রূণের সার্বিক বৃদ্ধি ও মস্তিষ্কের বিকাশে প্রোটিন গুরুত্বপূর্ণ। কোষের মেরামত ও নতুন কোষ তৈরিতেও ভূমিকা রাখে।
গুরুত্বপূর্ণ কথা
গর্ভাবস্থায় অপুষ্টি মা ও শিশু উভয়ের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। তাই নিরাপদ মাতৃত্ব এবং সন্তানের সুস্থ শারীরিক ও মানসিক বিকাশ নিশ্চিত করতে যুক্তিসংগত ও পুষ্টিকর খাদ্য অবশ্যই নিশ্চিত করা উচিত।