বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১৩ লাখ রোহিঙ্গার খাদ্য সহায়তা অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকার কথা জানিয়েছেন জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)-এর ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক কার্ল স্কাউ। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট এখনো রোমভিত্তিক এই জাতিসংঘ সংস্থার অন্যতম শীর্ষ অগ্রাধিকার।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) ইতালির রাজধানী রোমের এক হোটেলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ কথা জানান। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট, গাজা ও সুদানের দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি এবং বৈশ্বিক ক্ষুধা মোকাবিলায় তহবিল সংগ্রহের ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। স্কাউ ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গত ১৫ মাসের কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করে বলেন, রোহিঙ্গা মানবিক সংকটকে আবারও বৈশ্বিক মনোযোগের কেন্দ্রে আনতে তার প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়।
উভয় নেতা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তায় নতুন তহবিল সংগ্রহের জরুরি প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। স্কাউ বিশেষভাবে ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অধ্যাপক ইউনূসের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত রোহিঙ্গা ইস্যুতে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের প্রশংসা করে বলেন, “ওটা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সভা। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে এই ইস্যুটি আন্তর্জাতিক আলোচনার শীর্ষে থাকে।”
বৈঠকে নতুন উৎস থেকে অর্থায়নের সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা হয়, বিশেষ করে ধনী দেশগুলো ও বহুপাক্ষিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সহায়তা বাড়ানোর বিষয়ে। স্কাউ জানান, নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত সেই উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন মানবিক অঙ্গীকারের প্রেক্ষিতে ডব্লিউএফপি রোহিঙ্গাদের জন্য প্রতি মাসে ১২ ডলার করে খাদ্যভাতা অব্যাহত রাখবে।
ড. ইউনূস বৈশ্বিক ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় ডব্লিউএফপির ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, “সংস্থাটি মানবতার কল্যাণে যেভাবে কাজ করছে, তা সত্যিই অনুকরণীয়।” তিনি বাংলাদেশের নতুন স্কুল ফিডিং কর্মসূচি বাস্তবায়নে ডব্লিউএফপির সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, “এশিয়ার কিছু দেশ স্কুল ফিডিং উদ্যোগে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। আমরাও মানসম্পন্ন খাবার নিশ্চিত করে এই কর্মসূচিকে আরও সম্প্রসারিত করতে চাই।”
বৈঠকে বৈশ্বিক খাদ্য পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। স্কাউ জানান, বর্তমানে প্রায় ৩০ কোটি মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে। গাজা অঞ্চলে শত শত খাদ্যবাহী ট্রাক পাঠাতে ডব্লিউএফপি অব্যাহতভাবে কাজ করছে বলেও তিনি জানান।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার খাদ্যবিষয়ক উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ এবং পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম।