গুম-সংক্রান্ত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এখনও হাতে পায়নি বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। তবে সেনাসদরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে—এই মামলায় অভিযুক্ত ১৫ জন কর্মরত সেনা কর্মকর্তা বর্তমানে সেনা হেফাজতে আছেন।
শনিবার (১১ অক্টোবর) বিকেলে ঢাকা সেনানিবাসের আর্মি অফিসার্স মেসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সেনাবাহিনীর অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান।
তিনি জানান, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের হওয়া দুটি মামলায় মোট ৩০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে ট্রাইব্যুনাল, যাদের মধ্যে ২৫ জনই সেনাবাহিনীর বর্তমান বা সাবেক কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে ৯ জন অবসরপ্রাপ্ত, একজন এলপিআরে এবং ১৫ জন বর্তমানে কর্মরত।
মেজর জেনারেল হাকিমুজ্জামান বলেন, “৮ অক্টোবর টেলিভিশন স্ক্রল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার খবর জানার সঙ্গে সঙ্গে সেনাসদর থেকে ১৬ জন কর্মকর্তাকে হেফাজতে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে ১৫ জন ইতোমধ্যে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে রিপোর্ট করেছেন। শুধু মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ এখনো যোগাযোগ করেননি; তিনি বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়েছেন। তাকে ইলিগ্যাল অ্যাবসেন্ট ঘোষণা করা হয়েছে এবং দেশের সব বন্দরে তার প্রস্থানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, বর্তমানে সেনা হেফাজতে থাকা কর্মকর্তারা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন না। তবে প্রশাসনিক কারণে, যেমন বেতন ও রেশন সংক্রান্ত হিসাবের জন্য, তাদের ‘সংযুক্ত’ অবস্থায় রাখা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, “বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সংবিধান ও দেশের সকল আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা ন্যায়বিচারের পক্ষে আছি এবং থাকব—ন্যায়বিচারের সঙ্গে কোনো আপস করা হবে না।”
মেজর জেনারেল হাকিমুজ্জামান আরও বলেন, “গুম কমিশন ইতিমধ্যে কাজ করছে। সেনাবাহিনী আলাদা তদন্ত কমিশন করলে সেটি বিদ্যমান কমিশনকে আন্ডারমাইন করবে। তাই আমরা কমিশনকে সর্বোচ্চ সহায়তা দিচ্ছি।”
তিনি জানান, গুম কমিশন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর উভয়েই স্পষ্টভাবে বলেছেন—বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে এসব ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল না। ঘটনাগুলো ছিল কিছু কর্মকর্তার ব্যক্তিগত পদক্ষেপ, যা তখন র্যাব বা ডিজিএফআই-এ দায়িত্বে থাকা অবস্থায় সংঘটিত হয়।
ট্রাইব্যুনালের দুটি মামলায় চার্জশিটভুক্ত ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত সেনা কর্মকর্তারা হলেন—মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, কর্নেল কে এম আজাদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মশিউর রহমান জুয়েল ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন।
সংবাদ সম্মেলনের শেষে মেজর জেনারেল হাকিমুজ্জামান উল্লেখ করেন, “গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে সেনাবাহিনী অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা দায়িত্ব পালন করছে—যা দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম মোতায়েন। জাতীয় স্থিতিশীলতা রক্ষায় এই দায়িত্ব আমরা সততা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে পালন করছি। আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েন বর্তমানের তুলনায় তিন থেকে চার গুণ বাড়ানো হবে।”