রাজধানীসহ সারাদেশে প্রতিদিন গড়ে ৮৩টি অপমৃত্যুর মামলা রেকর্ড হচ্ছে। দুর্ঘটনা, আত্মহত্যা, পানিতে ডুবে মৃত্যু বা অজ্ঞাত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় এসব মামলা করা হয়। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি মাসে গড়ে আড়াই হাজারের বেশি অপমৃত্যুর মামলা রেকর্ড হচ্ছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত জুলাই মাসে ২ হাজার ৪৬০টি এবং জুনে আড়াই হাজারের বেশি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। গত বছরও একই সময়ে মামলার সংখ্যা প্রায় কাছাকাছি পর্যায়েই ছিল।
পুলিশের হিসাবে, এসব মামলার বেশিরভাগই আত্মহত্যাজনিত মৃত্যু। আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে ৫২ শতাংশ পুরুষ এবং ৪৮ শতাংশ নারী। প্রায় ৬০ শতাংশ গলায় ফাঁস দিয়ে, আর ২৫ শতাংশের বেশি বিষপান করে আত্মহত্যা করেছেন। আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে ১৮ বছরের নিচে ২৫ শতাংশ, ১৯–৩০ বছর বয়সী ৩৮ শতাংশ, ৩১–৪৫ বছর বয়সী ২২ শতাংশ এবং ৬০ বছরের বেশি ৫ শতাংশ।
আত্মহত্যার প্রবণতা রোধে পুলিশ সদর দপ্তর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতায় এলাকাভিত্তিক সচেতনতা কর্মশালা পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি প্রতিটি জেলায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের (ক্রাইম) নেতৃত্বে অপমৃত্যুর কারণ বিশ্লেষণ ও প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, কোনো ব্যক্তি প্রাকৃতিক নিয়মের বাইরে মারা গেলে সেটিকে ‘অপমৃত্যু’ বলা হয়। এ ধরনের মৃত্যুর ঘটনায় ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৪ ধারা অনুযায়ী ইউডি (আনন্যাচারাল ডেথ) মামলা রেকর্ড হয়। তদন্তে যদি হত্যার আলামত পাওয়া যায়, তাহলে অপমৃত্যুর মামলা হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।
একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, আত্মহত্যার অন্যতম বড় কারণ প্রযুক্তিনির্ভর জীবনযাপন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাব। তিনি বলেন, আজকের তরুণরা অনলাইনে আবেগ প্রকাশে অভ্যস্ত। সামান্য হতাশা বা সামাজিক চাপ থেকেও তারা চরম সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলছে।
তিনি আরও বলেন, অতিরিক্ত ভোগবাদী চিন্তা ও পারিবারিক যোগাযোগহীনতাও তরুণদের মধ্যে মানসিক চাপ বাড়াচ্ছে। দামি গ্যাজেট বা সামাজিক স্বীকৃতির প্রতিযোগিতাও আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়াচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফারজানা রহমান বলেন, অপমৃত্যু ও আত্মহত্যা কমাতে পারিবারিক সম্পর্ক দৃঢ় করতে হবে। সন্তানদের শুধু অধিকার নয়, দায়িত্ববোধও শেখাতে হবে। অভিভাবকরাও নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হলে এই প্রবণতা অনেকটা কমানো সম্ভব।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সমাজে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানো, মিডিয়ার দায়িত্বশীল প্রতিবেদন এবং প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা—এই দিকগুলোতেই এখন সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দেওয়া জরুরি।