Ridge Bangla

পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের দাবি প্রধান উপদেষ্টার

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি মনে করেন, এই পথেই মধ্যপ্রাচ্যের দীর্ঘস্থায়ী সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব।

শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রদত্ত ভাষণে তিনি এসব কথা তুলে ধরেন।

ড. ইউনূস বলেন, “আমি সবসময় মানুষকে আশার বাণী শুনিয়েছি; ভয় দেখিয়ে কিছু করা কখনো সমর্থন করিনি। কিন্তু আজ আমাকে ভিন্নভাবে সতর্ক করতে হচ্ছে—চরম জাতীয়তাবাদ, ধ্বংসাত্মক ভূরাজনীতি এবং মানুষের দুঃখ-দুর্দশার প্রতি ঔদাসীন্য আমাদের বহু দশকের অর্জনকে বিপন্ন করে তুলছে।”

গাজা পরিস্থিতিকে তিনি “মর্মান্তিক” বলে উল্লেখ করে বলেন, “শিশুরা না খেয়ে মারা যাচ্ছে, নিরপরাধ বেসামরিক মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে, হাসপাতাল-স্কুলসহ পুরো জনপদ ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। জাতিসংঘের স্বাধীন তদন্ত কমিশনের পর্যবেক্ষণের সঙ্গে আমরাও একমত—আমাদের চোখের সামনে একটি গণহত্যা সংঘটিত হচ্ছে। কিন্তু মানবজাতির পক্ষ থেকে তা বন্ধে যথেষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না।”

তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল সাম্য, মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। কিন্তু গত পাঁচ দশকে বারবার সেই অধিকার বাধাগ্রস্ত হয়েছে, জনগণকে পুনঃপুন সংগ্রাম ও ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে।

ড. ইউনূস আরও বলেন, গত বছর পালিত হয়েছে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’-এর প্রথম বার্ষিকী, যেখানে তরুণসমাজ স্বৈরাচারকে পরাজিত করেছিল। সেই অভ্যুত্থান ন্যায়বিচারভিত্তিক ও বৈষম্যমুক্ত সমাজ বিনির্মাণের পথ উন্মুক্ত করেছে, আর জনগণ সেই দায়িত্বই বর্তমান সরকারের হাতে তুলে দিয়েছে।

রাষ্ট্রের ভেঙে পড়া কাঠামো পুনর্গঠনের প্রসঙ্গে তিনি জানান, কেবল নির্বাহী আদেশে সংস্কার চালানোর বদলে সরকার বেছে নিয়েছে আরও কঠিন পথ—অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই প্রক্রিয়া। এজন্য বিচারব্যবস্থা, শাসন, নির্বাচন, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা, দুর্নীতি দমন ও নারী অধিকারসহ গুরুত্বপূর্ণ খাতে ১১টি স্বাধীন সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে।

এই সুপারিশ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়তে ৩০টিরও বেশি দল ও জোটকে নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। এর ফলেই গত জুলাই মাসে সব দল একসঙ্গে ‘জুলাই ঘোষণা’ গ্রহণ করে সংস্কার কার্যক্রমে সময়াবদ্ধ অঙ্গীকার করেছে।

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “আগামী নির্বাচনে যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন অনিশ্চিত থাকবে না। বাংলাদেশের গণতন্ত্র আর কখনো হুমকির মুখে পড়বে না।”

প্রধান উপদেষ্টা আরও জানান, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। পাশাপাশি স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নাগরিকবান্ধব সংস্কার কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

এই পোস্টটি পাঠ হয়েছে: ১৯

আরো পড়ুন