Ridge Bangla

তেল উত্তোলনে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশ

জ্বালানি তেলকে বলা হয় আধুনিক বিশ্ব অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। কোনো দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি, শিল্পায়ন কিংবা ভূরাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারে তেলের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে কেবল মজুত থাকলেই চলবে না, সেই তেল উত্তোলনের প্রযুক্তি ও বৈশ্বিক বাজারে বিক্রির সুযোগ পাওয়া সমান জরুরি। যেমন ভেনেজুয়েলার বিপুল তেল মজুত থাকলেও অর্থনৈতিক সংকট কাটছে না। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব কিংবা রাশিয়ার মতো দেশগুলো উত্তোলন ক্ষমতার কারণে শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে। ইউএস এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ইআইএ)-এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী তেল উত্তোলনে বিশ্বের শীর্ষ দশ দেশের চিত্র নিচে তুলে ধরা হলো।

১) যুক্তরাষ্ট্র

বর্তমানে বিশ্বের এক নম্বর তেল উত্তোলনকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র। তারা প্রতিদিন প্রায় ২ কোটি ১২ লাখ ব্যারেল তেল উত্তোলন করে, যা বৈশ্বিক উৎপাদনের প্রায় ২২ শতাংশ। শুধু উৎপাদন নয়, ভোগের দিক থেকেও যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষে। দেশটিতে দৈনিক প্রায় ২ কোটি ব্যারেল তেলের চাহিদা রয়েছে। মজুত নিয়ে ভিন্নতা থাকলেও ধারণা করা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রমাণিত তেল মজুত প্রায় ৬৮ থেকে ৭৪ বিলিয়ন ব্যারেল।

২) সৌদি আরব

দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সৌদি আরব। দেশটি প্রতিদিন প্রায় ১ কোটি ১১ লাখ ব্যারেল তেল উত্তোলন করে, যা বৈশ্বিক উৎপাদনের প্রায় ১১ শতাংশ। ওপেকের সবচেয়ে প্রভাবশালী সদস্য সৌদি আরবের অর্থনীতি মূলত তেল রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল। দেশটির অভ্যন্তরীণ চাহিদা দৈনিক প্রায় ৩৬ লাখ ব্যারেল।

৩) রাশিয়া

রাশিয়া প্রতিদিন প্রায় ১ কোটি ৭ লাখ ব্যারেল তেল উত্তোলন করে, বৈশ্বিক উৎপাদনের ১১ শতাংশ। ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এশিয়ার বাজারে রপ্তানি বাড়ায় তাদের উত্তোলনে বড় ধাক্কা লাগেনি। ভোগের তালিকায়ও রাশিয়া চতুর্থ স্থানে, প্রতিদিন ৩৭ লাখ ব্যারেল তেলের চাহিদা রয়েছে।

৪) কানাডা

চতুর্থ স্থানে রয়েছে কানাডা। দেশটি প্রতিদিন গড়ে ৫৮ লাখ ব্যারেল তেল উত্তোলন করে, যা বিশ্ব উৎপাদনের ৬ শতাংশ। উত্তোলনের বড় অংশ আসে আলবার্টা অঞ্চল থেকে। উৎপাদিত তেলের বেশির ভাগই যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়।

৫) চীন

পঞ্চম স্থানে রয়েছে চীন। দেশটি প্রতিদিন প্রায় ৫৩ লাখ ব্যারেল তেল উত্তোলন করে। তবে নিজেদের চাহিদা মেটাতে আমদানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। চীনে দৈনিক তেলের চাহিদা ১ কোটি ৫০ লাখ ব্যারেলের বেশি। ফলে তারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় অপরিশোধিত তেল আমদানিকারক দেশ।

৬) ইরাক

ষষ্ঠ স্থানে আছে ইরাক। দেশটি প্রতিদিন প্রায় ৪৪ লাখ ২০ হাজার ব্যারেল তেল উত্তোলন করে। বৈশ্বিক উৎপাদনের প্রায় ৪ শতাংশ আসে এখান থেকে। ইরাক উত্তোলন ক্ষমতা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে এবং ২০২৯ সালের মধ্যে দৈনিক ৬০ লাখ ব্যারেল উৎপাদনের লক্ষ্য স্থির করেছে।

৭) ব্রাজিল

লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল সপ্তম অবস্থানে। দেশটি প্রতিদিন প্রায় ৪৩ লাখ ব্যারেল তেল উত্তোলন করে। বিশ্বের গভীরতম তেলখনির বেশির ভাগই ব্রাজিলের উপকূলে অবস্থিত। দেশটির অভ্যন্তরীণ চাহিদা দৈনিক ৩০ লাখ ব্যারেলের মতো।

৮) সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)

অষ্টম স্থানে সংযুক্ত আরব আমিরাত। দেশটি প্রতিদিন প্রায় ৪১ লাখ ব্যারেল তেল উত্তোলন করে, যা বৈশ্বিক উৎপাদনের ৪ শতাংশ। এর মধ্যে প্রায় ৯৬ শতাংশ তেল আসে আবুধাবি থেকে। দেশটির জাতীয় কোম্পানি এডিএনওসি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল-গ্যাস কোম্পানি।

৯) ইরান

নবম স্থানে রয়েছে ইরান। দেশটি প্রতিদিন প্রায় ৪০ লাখ ব্যারেল তেল উত্তোলন করে এবং এর মধ্যে প্রায় ৪৩ শতাংশ রপ্তানি করে। ইরান বিশ্বের মোট প্রমাণিত তেল মজুতের প্রায় ১২ শতাংশের মালিক, যা ১৫ হাজার ৭০০ কোটি ব্যারেলের বেশি।

১০) কুয়েত

তেল উত্তোলনে দশম স্থানে রয়েছে কুয়েত। দেশটি প্রতিদিন প্রায় ২৯ লাখ ব্যারেল তেল উত্তোলন করে। এর ৭১ শতাংশই রপ্তানি করা হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তেল-গ্যাস খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে উৎপাদন ও পরিশোধন ক্ষমতা উভয়ই বৃদ্ধি করেছে কুয়েত।

তেল উত্তোলনের এই শীর্ষ দেশগুলো শুধু অর্থনৈতিক শক্তিই অর্জন করেনি, বরং বৈশ্বিক রাজনীতিতেও প্রভাব বিস্তার করছে। তবে শুধু তেল মজুত বা উত্তোলন নয়, প্রযুক্তি, বাজারে প্রবেশাধিকার ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও একটি দেশের শক্ত অবস্থান নিশ্চিত করে। তাই তেলের ওপর নির্ভরশীল অর্থনীতি টেকসই করতে বৈচিত্র্যময় কৌশল গ্রহণ অপরিহার্য।

এই পোস্টটি পাঠ হয়েছে: ৭৭

আরো পড়ুন