দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানীতে শাকসবজি, ফলসহ পণ্য নিয়ে আসা ট্রাকগুলোকে পথে পথে দিতে হচ্ছে চাঁদা। ট্রাকচালক ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, হাইওয়ে পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ, প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নাম ভাঙানো এবং শ্রমিক সংগঠনের পরিচয়ে এসব টাকা আদায় করা হয়।
সম্প্রতি নওগাঁ থেকে তিন টনের একটি ট্রাকে ঢাকার কারওয়ান বাজারে পণ্য আনতে গিয়ে চালক রুহুল আমিনকে নয় স্থানে মোট ২,৭৫০ টাকা চাঁদা দিতে হয়েছে। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতার কর্মী থেকে শুরু করে হাইওয়ে পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশ সব জায়গাতেই ‘চা-পানির’ অজুহাতে টাকা দিতে হয়েছে বলে জানান তিনি।
একই অভিযোগ মাগুরা, কুষ্টিয়া ও মেহেরপুরসহ সমগ্র দেশের চালকদেরও। তাঁদের ভাষ্যমতে, জেলার ভেতর থেকেই টাকার দাবির শুরু হয়। হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় রাজনৈতিক পরিচয়ে টাকা আদায় করা হয়। কোথাও মামলার ভয় দেখিয়ে, কোথাও আবার অতিরিক্ত মাল তোলার অজুহাতে চাঁদা নেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ পণ্য পরিবহন ফেডারেশনের একাধিক নেতার মতে, বর্তমানে একটি তিন টনের ট্রাকে পণ্য পাঠাতে গড়ে ১৬-১৭ হাজার টাকা খরচ হয়, যার মধ্যে ন্যূনতম ৩ হাজার টাকা চলে যায় চাঁদাবাজির পেছনে। এই অতিরিক্ত খরচ শেষ পর্যন্ত ভোক্তার ওপরই চাপ সৃষ্টি করছে।
সবজি ব্যবসায়ীরাও বলছেন, প্রতিদিন শত শত ট্রাক ঢাকায় আসে। প্রতিটি ট্রাক থেকে কয়েক হাজার টাকা করে দিতে হয়। বরিশালের মুলাদীর সবজি ব্যবসায়ী বাবুল জানান, গত বুধবারে ১০০ ট্রাক শিম ঢাকায় পাঠিয়ে ট্রাক প্রতি ৩ হাজার করে শুধু শিম পরিবহনেই একদিনে তাঁকে প্রায় তিন লাখ টাকা চাঁদা গুনতে হয়েছে।
পরিবহন সংশ্লিষ্টদের মতে, ট্রাকমালিকরা অতিরিক্ত ভাড়া নিতে বাধ্য হন এই অবৈধ খরচ মেটাতে। আর চালকেরা মামলা এড়াতে নগদ অর্থ দিয়ে বিষয়টি মিটিয়ে নিতে চান। সরকারের উদ্যোগে সড়কে ওজন মাপার যন্ত্র বসানোর ঘোষণা থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে অনৈতিক লেনদেনের পাশাপাশি সড়কের ক্ষতি ও দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বাড়ছে।