ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা আম্পায়ার হ্যারল্ড ডিকি বার্ড আর নেই। ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি আম্পায়ার হারল্ড ‘ডিকি’ বার্ড ৯২ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম জনপ্রিয় এই আম্পায়ারের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
১৯৯৬ সালে লর্ডস টেস্টে ভারত ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক আম্পায়ারিং থেকে অবসর নেন বার্ড। সে ম্যাচেই অভিষেক হয়েছিল ভারতের দুই মহাতারকা সৌরভ গাঙ্গুলী ও রাহুল দ্রাবিড়ের।
ক্রিকেট দুনিয়ার এই অনন্য ব্যক্তিকে নিয়ে তার প্রয়াত ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সাংবাদিক মাইকেল পারকিনসন বলেছিলেন, “শেক্সপিয়ার ছাড়া এমন প্রাণশক্তি ধারণ করা এক চরিত্র কল্পনা করা যেত না। ক্রিকেটের সৌন্দর্য হলো তার বৈশিষ্ট্যগুলো গ্রহণ করেছে এবং তার রসিকতাকে উদযাপন করছে।”
বার্ড স্কুলজীবন থেকেই ‘ডিকি’ নামে পরিচিত, যা সারাজীবন তার সঙ্গী হয়ে ছিল। ইয়র্কশায়ারের বার্নসলেতে বেড়ে ওঠা ডিকি সারাজীবন গর্বের সাথে নিজেকে শ্রমজীবী পরিবারের সন্তান ও প্রকৃত ইয়র্কশায়ারম্যান হিসেবে পরিচয় দিতেন। তার জন্মস্থান চার্চ লেনে তার একটি ভাস্কর্য রয়েছে। ভাস্কর্যটি উঁচু প্লিন্থে বসাতে হয়েছিল; কারণ নিচুতে থাকলে ভক্তরা তার বাড়ানো আঙুলে নানা কিছু ঝুলিয়ে রাখতো।
তার আম্পায়ারিং ক্যারিয়ারে উল্লেখযোগ্য ছিল ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালসহ মোট তিনটি বিশ্বকাপ ফাইনাল পরিচালনা। টেস্ট (৬৬টি) ও ওয়ানডে (৬৯টি) মিলিয়ে ১৩৫টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ পরিচালনা করেন, যা তখনকার বিশ্বরেকর্ড। ক্রিকেট ক্যারিয়ারে বার্ড ছিলেন জিওফ্রে বয়কটের সতীর্থ। ইয়র্কশায়ারের জার্সিতে একটি সময় প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটও খেলেছেন। মাঠে নেমেছেন লেস্টারশায়ারের হয়েও। তবে কখনো ইংল্যান্ডের জাতীয় দলের হয়ে খেলার সুযোগ পাননি। ইনজুরির কারণে খেলাধুলার সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করতে বাধ্য হয়েছিলেন।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৯৩টি ম্যাচ খেলে দু’টি সেঞ্চুরিও করেছিলেন বার্ড। তবে ক্রিকেট থেকে কখনো দূরে ছিলেন না। ক্রিকেট ক্যারিয়ারকে গুডবাই জানিয়ে আম্পায়ার হিসেবে থেকে গিয়েছিলেন ক্রিকেটের সঙ্গেই। ২২ গজের কাছে থাকতে চেয়েছেন সব সময়। তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্য ছাড়াই নিখুঁত সিদ্ধান্ত নিতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন এই ইংলিশ আম্পায়ার। ঘরোয়া ক্রিকেটে ১৯৯৮ সালে হেডিংলিতে ইয়র্কশায়ার-ওয়ারউইকশায়ার ম্যাচ দিয়ে শেষবার আম্পায়ার হিসেবে মাঠে নেমেছিলেন তিনি।
বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা আম্পায়ার হিসেবে স্বীকৃত হলেও ছোটবেলায় বার্ডের স্বপ্ন ছিল ফুটবলার হওয়ার। কিন্তু চোটের কারণে সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি।
ডিকি বার্ডের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে ক্রিকেট দুনিয়ায়। তার অবদান স্মরণে থাকবে অনন্তকাল।