বাঙালির অন্যতম ঐতিহ্যবাহী উৎসব পহেলা বৈশাখ। এই দিনে যেমন নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়া হয়, তেমনি দীর্ঘদিন ধরে একটি রীতিও পালিত হয়ে আসছে—হালখাতা। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই হালখাতা যেন হয়ে উঠেছে শুধুই স্মৃতি, বহু জায়গায় এই রীতিতে জমেছে ধুলা।
‘হালখাতা’ শব্দটি দুটি অংশে গঠিত—‘হাল’ ও ‘খাতা’। ‘হাল’ সংস্কৃতে অর্থ ‘লাঙল’ আর ফারসিতে ‘নতুন’। খাতা মানে হিসাবের খাতা। কৃষিনির্ভর সমাজে নতুন বছরের শুরুতে কৃষকরা বকেয়া পরিশোধ করে নতুন খাতা খুলতেন। দোকানে চলত মিষ্টিমুখ, আপ্যায়ন আর আয়োজন।
ইতিহাস বলছে, মুঘল সম্রাট আকবর বাংলা সন চালু করেন খ্রিস্টীয় ১৬ শতকে সালে, মূলত রাজস্ব আদায়ের সুবিধার জন্য। সেই থেকেই হালখাতার প্রচলন। ব্যবসায়ীরা বছরের হিসাব শেষ করে নতুন খাতা খুলতেন। গ্রামবাংলায় এই রীতি হয়ে উঠেছিল নববর্ষের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
একসময় দোকানে দোকানে রঙিন সাজ, ধূপ-সুগন্ধি, গ্রাহকদের মিষ্টিমুখ করানোর আয়োজন ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু এখন এই সব কিছুই প্রায় বিলুপ্তির পথে। নগর জীবনে হালখাতা এখন আর আগের মতো উৎসাহের কেন্দ্রবিন্দু নয়। তবে পুরান ঢাকার কিছু এলাকায় এখনও এই ঐতিহ্য টিকে আছে, যেমন শাঁখারী বাজার, ইসলামপুর, চকবাজার ইত্যাদি।
সময়ের ব্যবধানে মানুষ এখন মোবাইল ব্যাংকিং ও নগদ লেনদেনের ওপর বেশি নির্ভরশীল। ফলে হালখাতার প্রয়োজনীয়তা ফিকে হয়ে গেছে। তথাপি অনেকেই চান, এই ঐতিহ্য আবার ফিরে আসুক দোকানে দোকানে। আবারও বাঙালির নববর্ষ হোক প্রাণবন্ত, উৎসবমুখর।