বাংলা গানে নিজস্ব ধারা তৈরি করে শ্রোতাদের হৃদয়ে স্থায়ী আসন গড়ে তুলেছেন নচিকেতা চক্রবর্তী। প্রেম-ভালোবাসার অচেনা পথ, জীবনের বাঁকবদল কিংবা সমাজ-রাষ্ট্রের অসঙ্গতি—সবকিছুই উঠে এসেছে তাঁর কণ্ঠে ও কলমে। গতানুগতিক গানের ভিড়ে, বিশেষ করে হিন্দি গানের দাপটে যখন বাংলা গান কোণঠাসা, তখন অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো আবির্ভূত হয়েছিলেন তিনি। আজ তাঁর জন্মদিন। শুভ জন্মদিন নচিকেতা।
সার্টিফিকেট অনুযায়ী তাঁর জন্ম ১৯৬৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর কলকাতায় হলেও প্রকৃত জন্মসাল ১৯৬৪। শিকড় বাংলাদেশের পিরোজপুরে। পড়াশোনা করেছেন কলকাতার মনীন্দ্র কলেজে। শৈশব থেকেই গান ছিল তাঁর নেশা ও ভালোবাসা। সেই গানকেই তিনি করেছেন জীবনের পেশা ও পরিচয়।
গান লেখা, সুর করা থেকে সংগীতায়োজন—সবই তিনি করেন নিজ হাতে। তাঁর গান শুধু সুর নয়, হয়ে উঠেছে সময়ের দলিল, মানুষের গল্প আর প্রতিবাদের ভাষা। ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত প্রথম অ্যালবাম এই বেশ ভালো আছি দিয়েই বাংলা গানের ভুবনে বিপ্লব ঘটান তিনি। ‘নীলাঞ্জনা’, ‘কলকাতা’ বা ‘যখন সময় থমকে দাঁড়ায়’ তাঁকে রাতারাতি পৌঁছে দেয় জনপ্রিয়তার শিখরে।
এরপর একে একে আসে কে যায়?, দায়ভার, হাওয়া বদল, এই আগুনে হাত রাখোসহ অসংখ্য অ্যালবাম। সিনেমাতেও দিয়েছেন অমর সব গান। বিশেষ করে হঠাৎ বৃষ্টি ছবির গানগুলো তাঁকে এনে দেয় আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা। এরপরও তিনি কণ্ঠ দিয়েছেন খেলা ঘর, চৌধুরী পরিবার, রং নাম্বার, জুলফিকারসহ বহু ছবিতে।
গান ছাড়াও সাহিত্যেও রেখেছেন স্বাক্ষর। কাব্যগ্রন্থ, উপন্যাস, গল্প ও রম্যরচনায় প্রকাশ পেয়েছে তাঁর গভীর অনুভব ও সময়কে মুখোমুখি করার সাহস। নচিকেতা বাংলা গানে কেবল একজন শিল্পী নন, নিজেই এক আন্দোলন। নতুন সুর ও কথায় তিনি প্রজন্মের পর প্রজন্মকে নাড়া দিয়ে আজও আছেন ‘এই বেশ ভালো আছি’।