পশ্চিমবঙ্গের স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) ঘিরে দুর্নীতির অভিযোগে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক চাকরি হারিয়েছেন। এর জেরে রাজ্যজুড়ে শুরু হয়েছে তীব্র বিক্ষোভ, ধর্মঘট ও অনশন। চাকরিচ্যুত শিক্ষকরা ‘চাকরি ফেরত চাই’ স্লোগানে উত্তাল করে তুলেছেন কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত। আন্দোলনকারীরা এই ঘটনার জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দায়ী করছেন এবং তাঁর পদত্যাগ দাবি করেছেন।
গত ৩ এপ্রিল ভারতের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ এক রায়ে এসএসসি এবং এর মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া ২৫ হাজার ৭৫২ জন শিক্ষকের নিয়োগকে অবৈধ ঘোষণা করেন। এতে পশ্চিমবঙ্গের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যাপক অস্থিরতা দেখা দেয়।
এই রায়ের পেছনের ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, ২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নানান অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ অনুযায়ী, যারা পরীক্ষায় শূন্য পেয়েছিলেন, তাদের ওএমআর শিটে ম্যানিপুলেশন করে ৫০–৫২ নম্বর বসিয়ে বেআইনিভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। হাইকোর্টের নির্দেশে সিবিআই তদন্তে প্রথম পর্যায়ে ৫ হাজার ২৪৩ জন অযোগ্য প্রার্থীর তালিকা তৈরি হয়। কিন্তু রাজ্য সরকার আলাদাভাবে অযোগ্যদের বাদ না দিয়ে একসাথে ২৫ হাজারের বেশি নিয়োগ দেয়। এরপর থেকেই ক্ষুব্ধ যোগ্য প্রার্থীরা মামলা চালিয়ে যান, যার চূড়ান্ত রায় আসে সম্প্রতি।
এই রায়ের প্রেক্ষিতে রাজ্যজুড়ে চলছে লাগাতার আন্দোলন। প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তরের সামনে অবস্থান ধর্মঘট ও অনশন শুরু হয়েছে। কলকাতার এসএসসি ভবনের সামনে রাতভর চলেছে স্লোগান ও প্রতিবাদ।
চাকরি হারানো শিক্ষকদের প্রতিবাদে অনেক স্কুলে পাঠদান কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরাও।
বিরোধীদলগুলো এই ঘটনার জন্য সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দায়ী করে তাঁর পদত্যাগ দাবি করেছে। আন্দোলন এখন রাজনৈতিক রূপ নিচ্ছে এবং রাজ্যের শিক্ষাখাত গভীর সংকটে পড়েছে।