Ridge Bangla

গাজীপুরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, আতঙ্কে সাধারণ মানুষ

গাজীপুর মহানগরে একের পর এক ছিনতাই, খুন, চাঁদাবাজি ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে শহরজুড়ে অস্থিরতা ও নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে। সাধারণ মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত কয়েকটি ঘটনায় সাধারণ মানুষ ও পেশাজীবীরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও অপরাধ দমনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন।

১৬ আগস্ট রাতে ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি আশিক চৌধুরী অটোরিকশায় যাত্রাকালে দেড় লাখ টাকা ও দুটি ফোনসহ ছিনতাইয়ের শিকার হন। এর আগে ৭ আগস্ট স্থানীয় সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন ছিনতাইকারীদের ভিডিও ধারণ করতে গিয়ে খুন হন। মাঠ পর্যায়ে ঘুরে দেখা গেছে এমন হাজারো ঘটনা রয়েছে, যেখানে রাতে, সন্ধ্যায় বা সকালে ঘরের জন্য কিছু কিনতে গিয়েও মানুষ ছিনতাই ও লুটপাটের শিকার হয়েছেন।

এমন নৃশংস ঘটনাগুলো সেখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে তুলেছে। পুলিশের তথ্যমতে, শহরের অন্তত ১৯টি এলাকা ছিনতাইপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত। সন্ধ্যা নামলেই এসব এলাকায় চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। অনেক সময় অস্ত্রের মুখে টাকা, ফোন ও গয়নাও ছিনিয়ে নেওয়া হয়। বাধা প্রদান করতে গেলে ছুরিকাঘাত পর্যন্ত করা হয়।

এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে টঙ্গীর সান্দারপাড়া রাস্তার মাথা, হোন্ডা গলি, শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের পেছনে, মিলগেট, ন্যাশনাল টিউবস রোডের মাথা, সফিউদ্দিন রোডের মাথা, হোসেন মার্কেটের কাঠপট্টি, গাজীপুরা বাঁশপট্টি, তারগাছ, গাজীপুর চান্দনা চৌরাস্তা, টঙ্গী স্টেশন রোড, টঙ্গী ব্রিজ, টঙ্গী বাজার, জয়দেবপুর বাজার, লক্ষ্মীপুরা, কোনাবাড়ী, গাজীপুর নগরের বাসন, ভোগড়া বাইপাস ও গাজীপুর উড়ালসড়কের নিচের এলাকা।

বাসিন্দাদের দাবি, অপরাধপ্রবণ চিহ্নিত এলাকাগুলোতে এখন আর আগের মতো পুলিশি টহল ও চেকপোস্ট চোখে পড়ে না। অভিযানে গ্রেফতার হওয়ার পরও অপরাধীরা জামিনে বেরিয়ে আবার অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। অভিযোগ রয়েছে, মাদক ব্যবসায়ী ও ছিনতাইকারীদের কাছ থেকে কিছু পুলিশ সদস্য নিয়মিত মাসোহারা নেন। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ।

জিএমপি কমিশনার নাজমুল করিম জানান, সাম্প্রতিক সময়ে গাজীপুরে ৭২টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে প্রায় দুই লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই নানা অপরাধ ও সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ছেন। অপরাধের এমন ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধির পেছনে রাজনৈতিক প্রশ্রয় ও বিচারহীনতাও বড় কারণ বলে মনে করেন স্থানীয় সুশীল সমাজ।

উল্লেখযোগ্য সংখ্যক এলাকায় ফুটপাত, পরিবহন ও শিল্পকারখানা থেকে নিয়মিত চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। অনেক সময় সাংবাদিকরা এসবের তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন। চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে মাঝে মধ্যে অভিযান পরিচালনা করা হলেও মূল হোতারা থেকে যাচ্ছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই।

এলাকাগুলোতে শুধু চুরি, ছিনতাই নয়, অপহরণ ও ধর্ষণের ঘটনাও প্রতিনিয়ত বাড়ছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ছয় মাসে ধর্ষণ ও নারী-শিশু নির্যাতনের মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮৩টিতে, যা আগের ছয় মাসের তুলনায় বেশি। এর পূর্ববর্তী ছয় মাসে মামলার সংখ্যা ছিল ১৩৮টি।

বারবার আওয়াজ তোলার পরেও অপরাধ দমনে কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে গাজীপুরের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে ছিনতাই ও চাঁদাবাজি বন্ধের দাবি জানায়। এসবের পরেও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে দৃশ্যমান কোনো উন্নতি চোখে পড়ছে না। এর ফলে গাজীপুরের সাধারণ মানুষ থেকে পেশাজীবীদের মনে আতঙ্ক বেড়েই চলেছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) গাজীপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার শিশির বলেন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত উদ্যোগ না নিলে আগামী দিনে এই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। তাই এখন সম্মিলিত উদ্যোগে এই অপরাধের মূল উৎপাটন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, আগে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নেতারা মাদকসেবী ও কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করে অপরাধে প্রশ্রয় দিত। এখন তাদের পরিবর্তে নতুন এক দলের আবির্ভাব ঘটেছে।

অপরাধ নির্মূলে আমাদেরকে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এই পোস্টটি পাঠ হয়েছে:

আরো পড়ুন