Ridge Bangla

সড়কে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়াচ্ছে মোটরসাইকেল

চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় মাছবোঝাই একটি ছোট ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে বৃহস্পতিবার রাতে দুই তরুণ নিহত হয়েছেন। তাঁরা হলেন মো. রাকিব (২১) ও মো. জিয়াদ (২০)। ছয় বন্ধু তিনটি মোটরসাইকেলে কক্সবাজার থেকে সাজেক যাচ্ছিলেন।

এটি শুধু একক কোনো ঘটনা নয়। প্রতিদিনই সংবাদপত্র, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা টিভি চ্যানেলে দেখা যায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যুর খবর। এসব দুর্ঘটনায় নিহতদের বেশিরভাগই তরুণ। বেপরোয়া গতি, আঁকাবাঁকা রাস্তা এবং পূর্ণ ড্রাইভিং অভিজ্ঞতার অভাব মুহূর্তেই কেড়ে নিচ্ছে তরতাজা প্রাণ।

মোটরসাইকেল এখন বড় সড়কঝুঁকির যান হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। হরহামেশাই বেপরোয়া গতির কারণে সড়কে রক্ত ঝরছে। গত এক দশকে দেশে মোটরসাইকেলের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় পাঁচ গুণ। একই সময়ে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির হারও উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য অনুযায়ী, গত ১৩ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫ হাজার ৫৯৫ জনের মধ্যে ১ হাজার ৭৯৮ জনই মোটরসাইকেল আরোহী। অর্থাৎ নিহতদের প্রায় ৩২.১৪ শতাংশ। এর মধ্যে ৭০ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। এছাড়া নিহতদের ৮০ শতাংশ চালকের বৈধ লাইসেন্স ছিল না এবং গ্রামীণ এলাকায় অধিকাংশ চালক হেলমেট ব্যবহার করতেন না।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাবে, ২০২০ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত পাঁচ বছরে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩০ হাজার ৭৭৩টি। এতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩৩ হাজার ২৪৬ জন, যার মধ্যে ১১ হাজার ৮৬৪ জনই মোটরসাইকেল আরোহী। নিহত শিশুদের মধ্যে ৪ হাজার ৮০৬ জনের এক–তৃতীয়াংশও ছিল মোটরসাইকেল আরোহী।

প্রাণহানি ছাড়াও আহত হয়ে অনেকেই আজীবন পঙ্গুত্বের শিকার হচ্ছেন। রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে গত এক বছরে চিকিৎসা নিতে আসা ২২ হাজার ৬৪৫ দুর্ঘটনাগ্রস্তের মধ্যে ৮ হাজার ১৫০ জনই ছিলেন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত।

বিশেষজ্ঞদের মতে, স্থিতিশীল সড়কেও মোটরসাইকেলের দুর্ঘটনা ঝুঁকি সাধারণ গাড়ির তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশের বিশৃঙ্খল পরিবেশে এই ঝুঁকি আরও বেড়েছে। তাই নিবন্ধন নিয়ন্ত্রণ ও গণপরিবহনের বিকল্প ব্যবস্থা নিশ্চিত করা না গেলে মোটরসাইকেলের উপর নির্ভরতা এবং দুর্ঘটনা কোনোভাবেই কমানো সম্ভব নয়।

এই পোস্টটি পাঠ হয়েছে:

আরো পড়ুন