Ridge Bangla

আদৌ কি ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় করতে পারবেন ট্রাম্প?

দীর্ঘদিন পর এটি ছিল ইউক্রেনের জন্য ইতিবাচক একটি দিন। তবে রুশ আগ্রাসনের কারণে সৃষ্ট যুদ্ধ কবে শেষ হবে, তা এখনও অনিশ্চিত। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি গত সোমবার হোয়াইট হাউস সফর করেন। এবার আগেরবারের মতো ওভাল অফিসে কোনো নাটকীয়তা ঘটেনি। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনকে রক্ষা ও ইউরোপকে সুরক্ষিত করার মাধ্যমে কীভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কারের যোগ্য হয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে মহত্ত্ব অর্জন করতে পারেন, তার ইঙ্গিত দিয়েছেন।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় সময় সোমবার দুপুরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন জেলেনস্কি। বৈঠকে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়ে কাজ করবেন বলে আশ্বাস দেন ট্রাম্প। একই সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে নিয়ে একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক আয়োজনের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জেলেনস্কিকে সমর্থন জানাতে আসা ইউরোপীয় নেতাদের একটি দল তাদের মতাদর্শগত ভিন্নতা সত্ত্বেও ঐক্যবদ্ধ ছিল। তারা ক্যামেরার সামনে বক্তব্য দিয়ে ট্রাম্পকে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ানোর জন্য রাজনৈতিক ও মানসিক শক্তি জোগানোর চেষ্টা করেন। ট্রাম্পের আগের খিটখিটে আচরণে আন্তঃআটলান্টিক দেশগুলোর মধ্যে যে ফাটল তৈরি হয়েছিল, তা সারাতে এ আয়োজন বড় ভূমিকা রেখেছে। বিশেষ করে গত শুক্রবার আলাস্কায় ট্রাম্প ও পুতিনের বৈঠকের পর এই অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়।

জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সোমবার সন্ধ্যায় সামাজিক মাধ্যমে সম্ভাব্য ত্রিপক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলনের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। তিনি জানান, শিগগিরই ওই সম্মেলন হবে, যেখানে জেলেনস্কি ও পুতিন— উভয়ই থাকবেন। এর আগে রাশিয়া ও ইউক্রেনের নেতাদের মধ্যে একটি বৈঠক হতে পারে। জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ মার্ৎজ বলেন, এ ধরনের বৈঠক দুই সপ্তাহের মধ্যে হতে পারে, যা কূটনৈতিক গতি বাড়ার ইঙ্গিত দেয়।

ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার স্টাবও ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি ট্রাম্পকে বলেন, ‘এই দুই সপ্তাহে আমরা সম্ভবত গত সাড়ে তিন বছরের তুলনায় যুদ্ধের অবসানে বেশি অগ্রগতি অর্জন করেছি।’ ইউরোপীয় নেতারা ট্রাম্পের ভূয়সী প্রশংসা করেন। আলোচনার মূল বিষয় ছিল ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

ইউরোপের নেতাদের দাবি, যে কোনো শান্তিচুক্তির আগে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ট্রাম্প মার্কিন সামরিক বাহিনী ইউক্রেনে পাঠানোর বিষয়েও ইঙ্গিত দেন, তবে কিভাবে তা করা হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি। ইউক্রেন–রাশিয়ার সম্ভাব্য শান্তিচুক্তির সবচেয়ে বড় ইস্যু হলো ভূমি বিনিময়। রাশিয়া ইতোমধ্যে ইউক্রেনের বেশ কিছু এলাকা দখলে নিয়েছে, এগুলো তারা ছাড়বে কি না সেটিই এখন প্রশ্ন।

ট্রাম্প ইতোমধ্যে জেলেনস্কির হাতে একটি মানচিত্র তুলে দিয়েছেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট নিজ দেশের রক্তেভেজা মাটি ছেড়ে দেবেন কি না, সেটি একটি বড় প্রশ্ন। ‘কলিশনস: দ্য অরিজিন্স অব দ্য ওয়ার ইন ইউক্রেন অ্যান্ড দ্য নিউ গ্লোবাল ইনস্টেবিলিটি’ বইয়ের লেখক মাইকেল কিমগেজ সিএনএন ইন্টারন্যাশনালকে বলেন, ‘বর্তমানে সবাই কল্পনাপ্রসূত কূটনীতির পক্ষপাতী হলেও আমি মনে করি না এটি টেকসই হবে।’

দ্য গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণে বলা হয়, ট্রাম্পের ইউক্রেন কূটনীতি চারভাবে মোড় নিতে পারে। প্রথমত, জেলেনস্কি ও পুতিনের মধ্যে বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। দ্বিতীয়ত, নিরাপত্তা নিশ্চয়তার প্রসঙ্গ এসেছে। তৃতীয়ত, ট্রাম্প বিশ্বাস করছেন তিনি সংকট সমাধানে সক্ষম। চতুর্থত, মার্কিন অস্ত্র উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে।

এই পোস্টটি পাঠ হয়েছে: ১২

আরো পড়ুন