Ridge Bangla

স্বামীর নির্যাতনে প্রাণ হারাচ্ছেন স্ত্রীরা, থামছে না সহিংসতা

রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় গৃহবধূ সৈয়দা ফাহমিদা তাহসিনের (২৬) মৃত্যুর ঘটনায় নতুন করে আলোচনায় এসেছে পারিবারিক সহিংসতা। ফাহমিদার পরিবারের অভিযোগ, স্বামী সিফাত আলী স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যার পর ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করেছেন। চার সন্তানের মা ফাহমিদার মৃত্যু হয় গত ১৩ আগস্ট মধ্যরাতে। পরদিন তাঁর মা নাজমা বেগম মিরপুর মডেল থানায় সিফাতসহ ১০ জনকে আসামি করে মামলা করেন।

পরিবার জানায়, ঘটনার দিন রাতে ফাহমিদা রান্না করছিলেন। এ সময় সিফাত বাড়ি ফিরে ফাহমিদার সঙ্গে কথা কাটাকাটির ফলে উত্তেজিত হয়ে তাকে মারধর শুরু করেন। একপর্যায়ে তাঁকে কক্ষে আটকে ফেলে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় বলে সন্তানের বর্ণনা থেকে জানা যায়। হাসপাতালে নেওয়ার আগেই ফাহমিদা মারা যান। পরে স্বামী লাশ রেখে পালিয়ে যান।

মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাজ্জাদ রোমন এই বিষয়ে জানান, মামলাটি নিয়ে পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে। মামলার তদন্ত চলছে এবং শিগগিরই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হবে।

পরিসংখ্যান ও নারী নির্যাতনের চিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, দিন দিন স্বামীর হাতে স্ত্রী’দের সহিংসতার শিকার হওয়ার ঘটনা বাড়ছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে দেশে ৩৬৩টি পারিবারিক সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে।

এসব সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩২২ জন। এর মধ্যে ২০৮ জন নারী ও শিশু হত্যার শিকার হয়েছেন এবং আত্মহত্যাকারীর সংখ্যা ১১৪ জন। নিহতদের মধ্যে ১৩৩ জন নারী স্বামীর হাতে প্রাণ হারিয়েছেন। এই চিত্র শুধু মৃত্যুর সংখ্যা নয়, সমাজে পুরুষের কর্তৃত্বের সামনে নারীর অসহায় অবস্থানও প্রকাশ করে।

এদিকে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হেল্পলাইন ‘১০৯’-এ একই সময়ে সহায়তার জন্য ৪৮ হাজারের বেশি কল এসেছে। জাতীয় জরুরি সেবা ‘৯৯৯’-এ এ বছরের সাড়ে আট মাসে নারী নির্যাতনের ঘটনায় এসেছে ১৭ হাজারেরও বেশি কল, যার অধিকাংশই স্বামীর বিরুদ্ধে।

গত জুনে সিলেটের গোলাপগঞ্জে স্ত্রী সাবিনা বেগমকে হত্যা করে পুকুরে লাশ ফেলে দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন তাঁর স্বামী আনু মিয়া। এপ্রিলে নারায়ণগঞ্জে ইয়াছিন আলী পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রী, সন্তান ও স্ত্রীর বড় বোনকে হত্যা করে লাশ মাটিচাপা দেন।

এভাবেই দেশে পারিবারিক কলহের জেরে সামান্য কারণেও স্বামীর হাতে স্ত্রী’দের নির্যাতিত হওয়ার ঘটনা খবরের শিরোনাম হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল আই খান বলেন, পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতা, আইন প্রয়োগে দুর্বলতা ও সামাজিক কুসংস্কারের কারণে নারীরা নির্যাতনের শিকার হন।

তিনি বলেন, অনেক সময় চারপাশের চাপ ও বিবাহবিচ্ছেদের ভয়ে নারীরা সহিংস সংসারেই থেকে যেতে বাধ্য হন। নারীদের অবশ্যই নির্যাতনমূলক সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতে হবে। তাঁর মতে, উপযুক্ত শাস্তির ভয় থাকলে সচেতনতা বাড়বে এবং এই ধরনের অপরাধ কমবে।

আরো পড়ুন