Ridge Bangla

ফিরে দেখা রক্তাক্ত জুলাই গণঅভ্যুত্থান | ৩১ জুলাই ২০২৪

২০২৪ সালের ৩১ জুলাই ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ আন্দোলনের দিনটি। শিক্ষার্থীদের ডাকে সাড়া দিয়ে শিক্ষক, আইনজীবীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ সেদিন রাজপথে নেমে আসেন। “We Want Justice” স্লোগানে প্রকম্পিত হয় গোটা দেশ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে হত্যাকাণ্ড, গণগ্রেপ্তার, হামলা, মামলা ও গুমের প্রতিবাদে এবং শিক্ষার্থীদের নয় দফা দাবির সমর্থনে দেশব্যাপী আদালত প্রাঙ্গণ, ক্যাম্পাস ও সড়কে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।

সকালে থেকেই রাজধানী ও সারাদেশের নানা প্রান্তে প্রতিবাদে ফেটে পড়ে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। দুপুর সোয়া ১টার দিকে বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হাইকোর্টের দিকে মিছিল নিয়ে অগ্রসর হলে শিশু একাডেমির সামনে পুলিশ বাধা দেয় এবং কয়েকজনকে আটক করে। এর প্রতিবাদে দোয়েল চত্বরে পুনরায় সমবেত হয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে শিক্ষার্থীরা। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘হোয়াইট প্যানেল’-এর শিক্ষকরা এসে আন্দোলনে সংহতি জানান। প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী এ কর্মসূচি বিকেল ৩টায় শেষ হয়। একইদিন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। পরে সম্পাদক শাহ মঞ্জুরুল হক পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে ভিন্ন মত পেশ করেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের অংশগ্রহণে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও গণস্বাক্ষর সংগ্রহের কর্মসূচি পালন করে। চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, রংপুর, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, কুষ্টিয়া, টাঙ্গাইল, যশোর, লালমনিরহাটসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভ দমন করতে গেলে সংঘর্ষ বাঁধে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অবরোধ চলাকালে পাঁচজনকে আটক এবং সিলেটের সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হন।

দিন শেষে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা ঘোষণা দেয়, হেফাজতে থাকা সহপাঠীদের মুক্তি না দিলে তারা কেউ পরীক্ষা দেবে না। দিনব্যাপী আন্দোলনে প্রায় শতাধিক আহত হন এবং সমসংখ্যক শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। দিনটির আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল দীর্ঘ ১৪ দিন পর ফেসবুক, টিকটক, হোয়াটসঅ্যাপসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সচল হওয়া। দুপুর ৩টার পর থেকেই ব্যবহারকারীরা এসব প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করতে পারেন।

জুলাইয়ের শেষ দিনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে, আন্দোলন আর কেবল শিক্ষার্থীদের সীমায় আবদ্ধ নেই। জনতার দাবির কেন্দ্রবিন্দুতে দাঁড়িয়েছে হত্যার বিচার। ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি আন্দোলনকে নতুন করে চাঙ্গা করে তোলে, যা পরবর্তী সময়ে আরও ব্যাপক রূপ নেয়। ৩১ জুলাই তাই কেবল একটি দিন নয়, এটি হয়ে উঠেছে সম্মিলিত বাংলাদেশের ঐক্য ও প্রতিবাদের এক অনন্য শক্তির প্রতীক।

এই পোস্টটি পাঠ হয়েছে:

আরো পড়ুন