Ridge Bangla

রাজধানীতে ছিনতাই আতঙ্ক: ডিএমপির তালিকায় হাজার ছিনতাইকারী

রাজধানী ঢাকায় দিন-রাত সমানতালে চলছে ছিনতাইকারীদের তাণ্ডব। রাজপথ থেকে অলিগলি সবখানেই তাদের দাপট। দিনে দুপুরে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মুখে লুটে নিচ্ছে মানুষের টাকা ও শখের মোবাইল ফোনসহ প্রয়োজনীয় মূল্যবান জিনিসপত্র। প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন। শুধু মূল্যবান জিনিসপত্র হারানো নয়, বাধা দিলে প্রাণও দিতে হচ্ছে অনেক সময়।

গত শুক্রবার ভোরে সিলেটের শাহ্জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী সুপ্তি আক্তার বাসযোগে ঢাকায় ফেরেন। মেইনরোড থেকে রিকশায় করে শনির আখড়ায় তার বাসায় ফিরছিলেন। চলন্ত রিকশা থেকে ছিনতাইকারীরা তার ব্যাগ টেনে নিয়ে যায়। ব্যাগে থাকা দামি আইফোন, টাকা ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য জিনিসপত্র সবই হারিয়েছেন তিনি। ভোরবেলা রাস্তা ফাঁকা থাকায় এবং ছিনতাইকারীদের হাতে ধারালো অস্ত্র থাকায় কোনো প্রকার উচ্চবাচ্য না করে সুপ্তি আক্তার নীরবে বাসায় চলে যান।

১৩ আগস্ট বুধবার রাতে অফিসে নাইট-ডিউটি শেষ করে ভোরবেলায় বাসায় ফেরার পথে রায়েরবাজার এলাকায় সুপ্তি আক্তারের মতো একই ঘটনার শিকার হন কামরাঙ্গীরচরের বাসিন্দা তৈয়ব আলী। ৮-১০ দলের একটি কিশোর দল অস্ত্রের মুখে কয়েকটি ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা আটকে দিয়ে সাধারণ যাত্রীদের ফোন ও টাকা লুট করে। এতে তৈয়ব আলী মানিব্যাগে থাকা টাকা ও নিজের শখের মোবাইল ফোন হারিয়েছেন।

একইভাবে গত বৃহস্পতিবার ফার্মগেটে এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী ফাতেমা বেগম অফিস শেষে বাসায় ফেরার জন্য রিকশা খোঁজার সময় তার গলায় থাকা স্বর্ণের চেইন এক ছিনতাইকারী মুহূর্তেই ছিনিয়ে নেয়। চোখের পলকেই মানুষের ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে যায় সে। অতীত অভিজ্ঞতা সুখকর না হওয়ায় এ ব্যাপারে কোনো অভিযোগও করেননি তিনি।

এভাবেই দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে চুরি-ছিনতাই ও ডাকাতি বেড়েছে বহুগুণ। সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী থেকে শুরু করে সাধারণ পথচারী কিংবা ছাত্রছাত্রীরা ঘর থেকে বের হলে কেউই নিরাপদ নন। বিভিন্ন সিসিটিভি ক্যামেরায় প্রায়ই ধরা পড়ছে লোমহর্ষক চুরি ও ছিনতাইয়ের দৃশ্য। অস্ত্রের মুখে মুহূর্তেই মানুষ হারাচ্ছেন তাদের প্রিয় সম্পদ।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সূত্র জানায়, গত ছয় মাসে ১ হাজার ৬০০ ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার করা হলেও অপরাধ দমন করা যাচ্ছে না। কারণ কিছুদিন কারাভোগের পর তারা জামিনে বেরিয়ে আবার পুরনো কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। অনেক সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিজেরা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করলেও পর্যাপ্ত সাক্ষীর অভাব ও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে অপরাধীরা বেরিয়ে যাচ্ছে।

গোয়েন্দা সংস্থার সর্বশেষ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, রাজধানীর ৮টি ক্রাইম জোনে সক্রিয় রয়েছে ৯৭২ ছিনতাইকারী। এর মধ্যে তেজগাঁও ও মিরপুর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। তেজগাঁওয়ে সক্রিয় ২২৩ জন, রমনা ও লালবাগে ২২০ জন, ওয়ারী ও মতিঝিলে ২০৫ জন এবং গুলশান ও উত্তরা জোনে ১৬৭ জন ছিনতাইকারী চিহ্নিত হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তালিকাভুক্ত ছিনতাইকারীদের বড় অংশই পুরনো অপরাধী। তবে নতুন প্রজন্মের প্রায় ২১ শতাংশ ছিনতাইকারী এখন সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। তারা এক এলাকায় অপরাধ করে অন্যত্র লুকিয়ে থাকে, ফলে তাদের ধরতে বেগ পেতে হচ্ছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র উপ-কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, “ছিনতাইকারীদের ধরতে আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। ব্লক রেইড হচ্ছে প্রায়শই। প্রতিদিনই তেজগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার হচ্ছে।”

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা অব্যাহত থাকলেও রাজধানীবাসী এখনো ছিনতাই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। এ ব্যাপারে সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে স্থায়ী সমাধান আশা করছেন তারা।

আরো পড়ুন