Ridge Bangla

ট্রাম্পের শুল্কের লক্ষ্য এশীয় দেশগুলো; কে জিতছে আর কে হেরেছে?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক কৌশল আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বড় ধরনের আলোড়ন তুলেছে। বিশেষ করে এশিয়ার দেশগুলো এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম থেকে শুরু করে শ্রীলঙ্কা- বেশিরভাগই এখন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক হুমকির মুখে পড়েছে।

জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা ট্রাম্পের ২৫ শতাংশ নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণাকে ‘গভীরভাবে দুঃখজনক’ আখ্যা দিয়েছেন। জাপান বহুদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র, কিন্তু সাম্প্রতিক বাণিজ্য সম্পর্ক তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। বিশেষ করে, চাল আমদানির মার্কিন চাপে জাপান অস্বীকৃতি জানিয়েছে, যার ফলে দুই দেশের আলোচনার ফলাফলও ব্যাহত হয়েছে।

ট্রাম্প সম্প্রতি ২৩টি দেশকে নতুন শুল্ক নোটিশ পাঠিয়েছেন, যার মধ্যে ১৪টি এশীয় দেশ। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ‘বাকি সব দেশকে এখন থেকে ১৫ বা ২০ শতাংশ—যেটা হয় হোক না কেন, শুল্ক দিতে হবে।’ এই সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ আগস্ট পর্যন্ত।

অন্যদিকে, কানাডার ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণায় মার্কিন বাণিজ্য কৌশলের আগ্রাসী রূপ স্পষ্ট হয়েছে। অনেক দেশ এখন দ্রুত সমঝোতার পথ খুঁজছে। ইউনাইটেড ওভারসিজ ব্যাংকের বিশ্লেষক সান টেক কিন বলেন, এ সময়সীমা আলোচনার চাপ সৃষ্টি করেছে এবং কিছু দেশের জন্য তা সুযোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক অ্যালেক্স ক্যাপরি বলেন, এই চুক্তিগুলো অত্যন্ত জটিল এবং অনেক দেশ এখনো ট্রান্সশিপমেন্ট, উপাদান শুল্ক প্রযোজ্যতা, চূড়ান্ত পণ্যের সংজ্ঞা ইত্যাদি বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পায়নি। ফলে, বাস্তবায়নে সময় লাগবে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, যেসব দেশ উৎপাদন ও রপ্তানি নির্ভর, যেমন ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া বা থাইল্যান্ড—তারা দ্রুত সমঝোতা চাচ্ছে। আবার জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া কিছুটা সময় কিনতে পারছে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রভাবের কারণে।

ভারতের ক্ষেত্রে চিঠি এখনো আসেনি, তবে কৃষি খাত ও আমদানি নীতির মতো বিষয় নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে।

বিশ্লেষকেরা সতর্ক করে বলছেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এমন অস্থিরতা থেকে আমদানিকারক, রপ্তানিকারক ও ভোক্তা—সবাই ক্ষতির মুখে পড়বেন। বিশেষ করে এশিয়ার যেসব দেশের অর্থনীতি ইলেকট্রনিকস, পোশাক ও নির্মাণ খাতে নির্ভরশীল, তারা বড় ধাক্কা খাবে।

জাপানের প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়া

ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার পরদিনই টোকিও জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে এবং শত শত পরামর্শ কেন্দ্র খুলে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশে দাঁড়ায়। তারা একটি বিশ্বাসযোগ্য ও স্থায়ী চুক্তি চায় যাতে ট্রাম্প হঠাৎ মত পাল্টাতে না পারেন।

তবে আগস্টের মধ্যে চুক্তির সম্ভাবনা কম, কারণ জুলাইতে রয়েছে জাপানের উচ্চকক্ষের নির্বাচন।

চীন বনাম যুক্তরাষ্ট্র: কে জিতছে, কে হারছে?

এশীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র-চীন প্রতিদ্বন্দ্বিতা নতুন কিছু নয়। কিন্তু ট্রাম্পের শুল্ক নীতিতে চীন কৌশলগত সুবিধা নিচ্ছে। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ট্রাম্প সময় বাড়িয়ে নিজের অবস্থান দুর্বল করে ফেলেছেন এবং অনলাইনে শুল্ক নোটিশ প্রকাশ করাও রাজনৈতিক ভুল।

চীন এখন নিজেকে একটি স্থিতিশীল ও দায়িত্বশীল বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে তুলে ধরছে। যদিও চীনের সঙ্গেও অনেক এশীয় দেশের সম্পর্ক জটিল, তবু যুক্তরাষ্ট্রের আচরণ অনেক দেশকে ভাবাচ্ছে।

চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চূড়ান্ত চুক্তির সময়সীমা ১৩ আগস্ট পর্যন্ত নির্ধারিত আছে। ততদিনে স্পষ্ট হবে কে বেশি বন্ধু পাবে আর কে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ বাণিজ্যযুদ্ধ একদিনে শেষ হবে না—এর প্রভাব থাকতে পারে বহু দশক ধরে।

আরো পড়ুন