২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থনের পর সারা দেশে দায়ের হওয়া ১,৬০০-র বেশি মামলার মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশে তদন্তে সন্তোষজনক অগ্রগতি হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দিতে গিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্ট পুলিশ ও প্রশাসনিক সূত্র বলছে, চারটি প্রধান চ্যালেঞ্জ এই অগ্রগতিকে ব্যাহত করছে।
প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো হলো:
১. ময়নাতদন্তের অভাব: অধিকাংশ শহীদের মরদেহের ময়নাতদন্ত না হওয়ায় মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। আদালতের অনুমতি নিয়ে পুনরায় লাশ উত্তোলনের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।
২. অস্পষ্ট মেডিকেল রিপোর্ট: অনেক ক্ষেত্রে প্রতিবেদনগুলোতে মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট কারণ যেমন গুলিবিদ্ধ হওয়া, তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই।
৩. ভুল এজাহার: ঘটনাস্থল বা ঘটনার বর্ণনায় অসঙ্গতি ও ভুল থাকায় তদন্তে জটিলতা তৈরি হচ্ছে।
৪. ঢালাও আসামি: অধিকাংশ মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি উল্লেখ থাকায় সুনির্দিষ্ট তদন্ত ব্যাহত হচ্ছে।
এছাড়া, পরিচয়হীন বা বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন হওয়া মরদেহগুলো তদন্তে নতুন প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। ভিডিও ফুটেজ ও ফরেনসিক বিশ্লেষণ থেকে রিপোর্ট পেতেও সময় লাগছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ১,৬০১ মামলার মধ্যে ৬৩৭টি হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত। এর মধ্যে ৬০-৭০টি তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। জুলাই মাসেই অন্তত ১০টি অভিযোগপত্র আদালতে দেওয়া হতে পারে।
ঢাকা জেলায় দায়ের হওয়া ১১৪টি মামলার মধ্যে ১৫টি হত্যা মামলা। এখানেও প্রায় ৩০টি মামলার তদন্ত প্রায় শেষ হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। প্রতিটি মামলার ক্ষেত্রে যথাযথ তথ্য-প্রমাণ ও সাক্ষ্য সংগ্রহের মাধ্যমে অভিযোগপত্র প্রস্তুতের চেষ্টা চলছে।
তদন্ত তদারকিতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ১০টি বিশেষ মনিটরিং দল গঠন করা হয়েছে, যারা বিভাগভিত্তিক ও আলাদাভাবে রাজধানী ও গাজীপুরে কাজ করছে। তাদের কাজ হলো মামলার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ, ঢালাও আসামির তালিকা যাচাই ও প্রয়োজনীয় সংশোধন নিশ্চিত করা।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো অভিযোগ করেছে, আন্দোলনের সময় আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা পেতে বাধা দেওয়া হয়েছে এবং পরিবারগুলোর সম্মতি না থাকায় অনেক ময়নাতদন্ত সম্ভব হয়নি।
সরকার এখন পর্যন্ত ৮৪৪ জন শহীদের নাম গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে। তবে সব হত্যার ঘটনায় মামলা হয়নি, কারণ কিছু মরদেহের পরিচয় নিশ্চিত হয়নি এবং কিছু পরিবার মামলা করতে অনিচ্ছুক।
শহীদ ফারহান ফাইয়াজের বাবা শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, “এক বছর পেরিয়ে গেলেও সন্তানের হত্যার বিচার নিয়ে আমরা এখনো অন্ধকারে।” তার মতে, “ফ্যাসিবাদ পতনের পর সরকার ন্যায়বিচারের প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবতা ভিন্ন।”
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, সব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও অধিকাংশ মামলার তদন্ত শেষ করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। অনুপস্থিত নথিপত্র থাকলেও, বিকল্প তথ্যসূত্র বিশ্লেষণের মাধ্যমে সত্য উদঘাটনের চেষ্টা অব্যাহত আছে।