সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমাদ আল-শারা আজারবাইজানে ইসরাইলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে গোপন বৈঠকে অংশ নিয়েছেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। যদিও দামেস্ক সরকার এই বৈঠকের বিষয়টি অস্বীকার করেছে, সিরিয়ার প্রেসিডেন্সির ঘনিষ্ঠ সূত্র অন্তত একটি বৈঠকে আল-শারার উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে। রোববার (১৩ জুলাই) সামা টিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
বৈঠকগুলোতে আলোচ্য বিষয় ছিল সিরিয়া-ইসরাইল সম্ভাব্য নিরাপত্তা চুক্তি, ইরানের মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব, হিজবুল্লাহর অস্ত্রভাণ্ডার, লেবানন থেকে পরিচালিত ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলোর ভবিষ্যৎ এবং গাজা থেকে বিতাড়িত ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসন।
এই আলোচনায় সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসআদ আল-শিবানী এবং ইসরাইলের সঙ্গে নিরাপত্তা সংলাপের দায়িত্বে থাকা আহমেদ আল-দালাতি অংশ নেন। ইসরাইলের পক্ষে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয়ের বিশেষ দূত ও ঊর্ধ্বতন সামরিক-গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
বৈঠকগুলোর ভেন্যু ছিল আজারবাইজানের রাজধানী বাকু। ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে এই স্থান নির্ধারণ করে, যা ইরানের প্রতি একটি রাজনৈতিক বার্তা বলেও মনে করা হচ্ছে। এর আগে বাকু ইসরাইল-তুরস্ক মধ্যস্থতা সহ অন্যান্য আঞ্চলিক আলোচনার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
আলোচনায় দামাস্কাসে ইসরাইলের একটি সমন্বয় অফিস খোলার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। যদিও এটি আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক স্বীকৃতি নয়, তবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতির ইঙ্গিত দেয়।
সম্প্রতি আল-শারা আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এই সফরের ফাঁকে ইসরাইলি প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে সিরিয়ার সরকারিভাবে দাবি করা হয়েছে, এসব আলোচনায় আল-শারা সরাসরি উপস্থিত ছিলেন না।
কিছু প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল, ইসরাইলের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা আবুধাবিতে আল-শারার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। কিন্তু পরে জানা যায়, ওই সময়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন, ফলে সেই খবরের সত্যতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়।
বাশার আল-আসাদের শাসন পতনের পর সিরিয়ার রাজনৈতিক চিত্রে বড় পরিবর্তন এসেছে। আসাদের শেষ সময়টায় ইসরাইল সিরিয়ার কিছু এলাকায় সামরিকভাবে সক্রিয় ছিল, সেই অবস্থানের ভবিষ্যৎও আলোচনার এজেন্ডায় রয়েছে বলে জানা গেছে।
যদিও এসব বৈঠকের পূর্ণাঙ্গ ফলাফল এখনো প্রকাশ্যে আসেনি, তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইসরাইল-সিরিয়া শীর্ষ পর্যায়ের এই গোপন আলোচনাগুলো মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে। বাকু এই প্রক্রিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
ইসরাইল বা সিরিয়ার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করা হয়নি।