Ridge Bangla

চুলকানি: কোন রোগ না, এটি রোগের উপসর্গ মাত্র

itching

চুলকানি নিয়ে যেসব রোগী হাসপাতালে আসে, তার বেশিরভাগই স্ক্যাবিসের রোগী। স্ক্যাবিস হলো একটি পরজীবী সংক্রমণ, যা Sarcoptes scabiei hominis নামক পরজীবীর কারণে হয়। এই পরজীবী ত্বকের নিচে গর্ত করে বাসা বাঁধে। পরজীবী, তার ডিম ও বর্জ্য শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা উত্তেজিত করে আ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, যার ফলে ত্বকে লালচে ফুসকুড়ি হয় এবং তীব্র চুলকানি হয়। সাধারণত রাতে চুলকানি বেড়ে যায়, কারণ তখন কীটগুলো বেশি সক্রিয় থাকে।

স্ক্যাবিসের সাধারণ লক্ষণগুলো হলো

  • তীব্র চুলকানি – বিশেষ করে রাতে বেশি হয়।
  • লালচে ফুসকুড়ি – ত্বকে ছোট ছোট গুটির মতো দেখা যায়।
  • Burrows – ত্বকের নিচে সাপের মতো আঁকাবাঁকা লাইন, যা কীটের চলার পথ।
  • ঘন ঘন চুলকানোর ফলে ঘা হয়ে সেখানে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হতে পারে।

শরীরের যেসব স্থান সাধারণত আক্রান্ত হয়

  • আঙুলের ফাঁকে।
  • কবজি, কনুই ও বগল।
  • কোমর ও নাভির চারপাশ।
  • যৌনাঙ্গ ও উরুর ভেতরের দিক।
  • শিশুদের ক্ষেত্রে হাত-পা, মুখ ও মাথা।

কীভাবে ছড়ায়

  • স্ক্যাবিস মূলত ছড়ায় সরাসরি ত্বক-স্পর্শের মাধ্যমে, কারণ এটি একটি খুব সংক্রামক পরজীবীজনিত রোগ। পরিবারের সদস্যদের মাঝে একজনের হলে সবার হতে পারে।
  • কীট কিছু সময় বাঁচতে পারে বালিশ, চাদর, তোয়ালে বা জামাকাপড়ে। আক্রান্ত ব্যাক্তির ব্যবহৃত জিনিস অন্য কেউ ব্যবহার করলে হতে পারে।
  • হোস্টেল, ডে-কেয়ার সেন্টার, বা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় একজনের হলে সবার হয়।
  • আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে যৌন সংস্পর্শে আসলে ও হতে পারে।

রোগ নির্ণয়

সাধারণত স্ক্যাবিসের ডায়াগনোসিস রোগীর লক্ষণ ও ত্বকের অবস্থা দেখে করা হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে পরীক্ষাও করা হয়।

স্ক্যাবিসের চিকিৎসা পদ্ধতি

  • ত্বকে স্ক্যাবিসাইডাল ঔষধ দেওয়া হয়।
  • চুলকানি কমানোর জন্য এন্টি হিস্টামিন জাতীয় ঔষধ দেওয়া হয়।
  • যদি চামড়াতে ইনফেকশন হয়ে থাকে, তাহলে এন্টিবায়োটিক লাগতে পারে।

গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা

  • চিকিৎসা শুরু হলে পুরো পরিবার বা সংস্পর্শে থাকা সবাইকে চিকিৎসা দিন, এমনকি যদি কারও লক্ষণ না-ও থাকে। পরিবারের কেউ চিকিৎসা না করলে রোগ আবার ফিরে আসতে পারে।
  • ব্যবহার করা কাপড়-চোপড়, বিছানাপত্র, তোয়ালে গরম পানিতে ধুয়ে ভালোভাবে শুকিয়ে নিন বা গরম ইস্ত্রিতে আয়রন করুন; তাতে কীট মরবে।
  • আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিসপত্র আলাদা করে রাখুন। বিছানা, জামা, তোয়ালে শেয়ার করা যাবে না। শিশুদের খেলনা ও কাপড়ও পরিষ্কার রাখতে হবে।
  • ঘনিষ্ঠ শারীরিক সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন যতদিন না সম্পূর্ণ সুস্থ হন, বিশেষ করে ঘুমানো, আলিঙ্গন, যৌন সংস্পর্শ।
  • শরীরের চুলকানি বা গুটি অবহেলা করবেন না।

চিকিৎসা না করালে কী হতে পারে?

স্ক্যাবিসের চিকিৎসা না করলে বা ঠিকভাবে না করলে কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে:

  • সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন: ঘন ঘন চুলকানোর ফলে ত্বকে ঘা হয়। ঘা থেকে স্ট্যাফাইলোক্কাস (Staph) বা স্ট্রেপ্টোকক্কাস (Strep) নামক ব্যাকটেরিয়ায় ইনফেকশন হতে পারে।
  • পোস্ট-স্ক্যাবিটিক প্রুরিটাস: চিকিৎসার পরও সপ্তাহখানেক (বা মাস) চুলকানি থাকতে পারে, এটি শরীরের এলার্জিক প্রতিক্রিয়া, তবে এতে কীট থাকে না।
  • নেফ্রাইটিস: সংক্রমিত ব্যাকটেরিয়ার (Strep) কারণে কিডনির প্রদাহ বা Post-streptococcal glomerulonephritis হতে পারে। শিশুরা বেশি ঝুঁকিতে থাকে।

স্ক্যাবিস কেন সহজে সেরে উঠে না?

  • অধিকাংশ মানুষ চুলকানি হলে শুরুতেই ডাক্তারের কাছে না এসে ফার্মেসি থেকে এলার্জির মেডিসিন এনে খাওয়া শুরু করে। এতে চুলকানি সাময়িক কমে, কিন্তু রোগের ট্রিটমেন্ট আর হয় না।
  • বাসার সবাই একসাথে চিকিৎসা না করানো।
  • ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী মেডিসিন না নেওয়া।

সর্বোপরি মনে রাখতে হবে, চুলকানি কোন রোগ না, এটি রোগের উপসর্গ মাত্র। একটা ছোট কীট থেকে যদি ঠিকভাবে ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে শরীরের অনেক বড় ক্ষতি হতে পারে। তাই লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।

রচনা: ডা. মো. রাসেল সিকদার
সম্পাদনা: নাসিম রুশেলী

আরো পড়ুন