পৃথিবীর উন্নত অনেক দেশের গ্রামেও যেখানে লাইব্রেরির সুযোগ নেই, সেখানে বাংলাদেশের কুড়িগ্রামে দিনমজুর জয়নাল আবেদীন গড়ে তুলেছেন এক আলোর কুঞ্জ—‘সাতভিটা গ্রন্থনীড়’। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি না পেরোনো এই মানুষটি বইয়ের প্রতি ভালোবাসাকে শক্তি বানিয়ে গড়ে তুলেছেন একটি পূর্ণাঙ্গ পাঠাগার।
জয়নালের পাঠ-ভ্রমণের সূচনা গাজীপুরে ইটভাটায় শ্রম দিতে গিয়ে। ফাঁকা সময়ে ফুটপাত থেকে কমদামের বই কিনে শুরু করেন পড়া। সেই নেশাই এক সময় রূপ নেয় গ্রামে লাইব্রেরি গড়ার স্বপ্নে। ২০১১ সালে গাজীপুর থেকে বই এনে নিজের গ্রাম উলিপুর উপজেলার সাতভিটায় টিনের ঘরে চালু করেন প্রথম পাঠাগার। তবে রাজনৈতিক সহিংসতায় তা বন্ধ হয়ে যায় ২০১৩ সালে। কিন্তু হাল না ছেড়ে আবারও বই সংগ্রহ শুরু করেন।
অবশেষে নিজের কষ্টার্জিত অর্থে এক শতক জমি কিনে গড়ে তোলেন ‘সাতভিটা গ্রন্থনীড়’। ২০২১ সালে স্থানীয় সরকার বিভাগের সহায়তায় তিনি একটি পাকাঘর নির্মাণ করতে পারেন। বর্তমানে পাঠাগারটিতে রয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বই। প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত পাঠাগার খোলা থাকে। ৩০–৪০ জন নিয়মিত পাঠক এখানে বই পড়তে আসেন, যাদের বেশিরভাগই শিক্ষার্থী।
তবুও সীমাবদ্ধতা আছে—পাঠকদের জন্য নেই পর্যাপ্ত জায়গা, বাথরুম বা পানির ব্যবস্থা। জয়নালের ইচ্ছা, শিশুদের জন্য আরও বেশি বই রাখতে চান, যেন তাদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে ওঠে ছোটবেলা থেকেই।
বকসীগঞ্জ রাজিবিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেহেরুজ্জামান বলেন, “একজন দিনমজুর হয়েও জয়নাল যে কাজ করেছেন, তা গর্বের। তার পাঠাগার এই এলাকার শিক্ষার পরিবেশ বদলে দিতে পারে।”
জয়নালের কণ্ঠে প্রত্যয়—“যত কষ্টই হোক, আমি বইয়ের আলো ছড়িয়ে যাব।”