Ridge Bangla

স্যানিটেশন প্রকল্পে চরম অনিয়ম, আইএমইডির প্রতিবেদনে উঠে এলো ভয়াবহ চিত্র

‘মানবসম্পদ উন্নয়নে গ্রামীণ পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি’ প্রকল্পে ভয়াবহ অনিয়ম, দুর্নীতি, নিম্নমানের নির্মাণকাজ ও আর্থিক অপচয়ের চিত্র উঠে এসেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তদন্ত প্রতিবেদনে। দেশের ৩০ জেলায় বাস্তবায়নাধীন এই প্রকল্পের অধীনে নির্মিত বহু টুইন পিট ল্যাট্রিন, পাবলিক টয়লেট ও হাত ধোয়ার স্টেশন ইতোমধ্যে পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের উপকরণ, নকশা উপেক্ষা করে বসানো হয়েছে পাইপলাইন, এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই জলাশয় ভরাট করে নির্মাণ কাজ করা হয়েছে। প্রতিবন্ধীদের জন্য নির্মিত টয়লেটগুলো বাস্তবে তাদের জন্য উপযোগী নয়।

কমিউনিটি ক্লিনিকের টয়লেট নির্মাণেও একই ধরনের সমস্যা দেখা গেছে—অনেক টয়লেট দূরে বা ডোবার মধ্যে স্থাপন করা হয়েছে এবং ব্যবহার উপযোগী নয় বলে সেগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি গত বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ছিল মাত্র ৪৬ শতাংশ, যদিও প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ২০২৫ সালের ডিসেম্বরেই।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নিম্নমানের কাজ সত্ত্বেও ঠিকাদারদের বিল যাচাই না করেই অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে এবং জেলা সমন্বয়কারীদের ওপর নেতিবাচক প্রতিবেদন না দিতে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে। প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

১,৮৮৩ কোটি টাকার এই প্রকল্পে ১,৮৩১ কোটি টাকা এসেছে বিশ্বব্যাংক ও এআইআইবি’র ঋণ হিসেবে। অথচ কাজের গুণগতমান অত্যন্ত নিচু, টাইলস ভেঙে গেছে, পানির স্টেশন ভেঙে পড়েছে এবং বিদ্যুৎ সংযোগ নেই অধিকাংশ স্থাপনায়। পাইপ বসানো হয়েছে নির্ধারিত তিন ফুটের বদলে মাত্র কয়েক ইঞ্চি গভীরে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, কাজ চলাকালীন সময়েই বহু স্থাপনা অকেজো হয়ে গেছে, যা সাধারণভাবে প্রকল্প শেষে দেখা যায়। পরামর্শকদের পেছনে ব্যয় হয়েছে ২৭ কোটি টাকা, কিন্তু কাজের মান ও অগ্রগতি নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন।

এছাড়াও, প্রতিবছর অন্তত চারটি করে পিআইসি ও পিএসসি সভা হওয়ার কথা থাকলেও প্রকল্প শুরুর পর থেকে তা নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হয়নি। আইএমইডির মতে, সঠিক সময়ে সভাগুলো হলে এত অনিয়ম নাও ঘটত।

প্রকল্প পরিচালক দাবি করেছেন, সব জায়গায় অনিয়ম হয়নি এবং তিনি নিজে কোনো অনিয়ম করেননি। তবে মাঠ পর্যায়ের তথ্য, বাস্তব পর্যবেক্ষণ ও কর্মকর্তাদের মতে, এই পরিসরে অনিয়ম পরিচালকের সহায়তা ছাড়া সম্ভব নয়।

প্রতিবেদনের শেষে বলা হয়, অবকাঠামোগুলোর দ্রুত ক্ষয়ে সরকারের বিপুল আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। তাই ঠিকাদারদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় এবং সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহির আওতায় আনার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।

আরো পড়ুন