যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাথমিক নির্বাচনে ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রার্থী জোহরান মামদানি বিপুল ভোটে বিজয় অর্জন করেছেন। তার এই জয় শহরের প্রথম দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত মুসলিম মেয়র হওয়ার পথে এক বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে তার মুসলিম পরিচয় এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারের কঠোর সমালোচনার কারণে প্রবাসী হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী এবং বিজেপিপন্থীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
আল–জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩৩ বছর বয়সী মামদানিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘জিহাদি’, ‘ইসলামপন্থী’ এবং ‘ভারতবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে আক্রমণ করা হচ্ছে। নিউ জার্সিভিত্তিক ‘ইন্ডিয়ান আমেরিকানস ফর কুয়োমো’ নামে একটি গোষ্ঠী নিউইয়র্কের আকাশে ‘Safe New York City from Global Intifada – Reject Mamdani’ লেখা একটি ব্যানারও ওড়ায়।
ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান Center for the Study of Organized Hate-এর পরিচালক কায়লা বাসেট বলেন, “এটি কেবল মামদানিকে নয়, পুরো মুসলিম সম্প্রদায়কে অপরাধী হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা।”
ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি দলের সংসদ সদস্য ও বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গনা রনৌত সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “তিনি তো ভারতীয়ের চেয়ে পাকিস্তানির মতো শোনাচ্ছেন।” এরপর মামদানির মা, প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক মীরা নায়ারের হিন্দু পরিচয় টেনে এনে বলেন, “তার হিন্দু বংশ যা-ই হোক, এখন দেখছি সে হিন্দুধর্ম ধ্বংস করতেই উঠেপড়ে লেগেছে।”
মামদানি যখন প্রাথমিক নির্বাচনে জয় পান, তখন বিজেপিপন্থী ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আজ তক দাবি করে, তিনি নাকি এমন সব সংগঠন থেকে অর্থ সহায়তা পেয়েছেন, যেগুলো ভারতবিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত।
জোহরান মামদানি নিউইয়র্কে মুসলিম পরিচয়, মোদি সরকারের সমালোচনা এবং দক্ষিণ এশীয় দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত অভিবাসী কমিউনিটির পক্ষে সোচ্চার ভূমিকার মাধ্যমেই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। তার এই জয় শুধু নিউইয়র্ক শহরের রাজনীতিতেই নয়, প্রবাসী ভারতীয় সমাজ ও বৈশ্বিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করছে।
এই প্রেক্ষাপটে মামদানির বিরুদ্ধে মোদি সমর্থকদের ক্ষোভ অনেকাংশেই তাদের মুসলিমবিদ্বেষী মনোভাবের প্রতিফলন বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।