জাপানে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে গিয়ে চরম দারিদ্র্য, নিঃসঙ্গতা এবং অবহেলার শিকার হয়ে না–খেয়ে মারা গেছেন বাংলাদেশের এক তরুণ। মুন্সিগঞ্জের ২৬ বছর বয়সী আপন নামের মেধাবী এই শিক্ষার্থীর মৃত্যু যেন এক ভয়াবহ বাস্তবতার চিত্র তুলে ধরেছে।
আপন পড়তেন জাপানের সাইকামা শহরের কান্ত ইন্ডাস্ট্রিয়াল কলেজে, বিভাগ ছিল অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং। পরিবার ও নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের আশায় তিনি বিদেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন। শুরুর দিকে সবকিছু স্বাভাবিক থাকলেও গত বছরের শেষ দিকে অর্থনৈতিক সংকটে ভেঙে পড়েন তিনি। টিউশন ফি দিতে না পারায় বন্ধ হয়ে যায় পড়াশোনা, সঙ্গে জমতে থাকে বাসা ভাড়া ও অন্যান্য বিলের দেনা। একপর্যায়ে তার ঘরে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি সবই বন্ধ হয়ে যায়। মোবাইল চার্জ দিতে না পারায় বন্ধ হয়ে পড়ে তার দুইটি সিম, ফলে তিনি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন প্রিয়জনদের থেকে।
প্রতিবেশীরা জানান, মৃত্যুর অন্তত দুই সপ্তাহ আগে থেকেই তাকে দেখা যায়নি। একবার রান্নাঘরের জানালার ফাঁক দিয়ে তিনি বলেছিলেন, “কিছুই দেখতে পাচ্ছি না।” তখন জানা যায়, চার দিন ধরে তিনি কিছু খাননি। খাবার দিলেও তিনি তা গ্রহণ করেননি। তবে জাপানের আইন অনুযায়ী, অনুমতি ছাড়া কারও ঘরে প্রবেশ নিষেধ হওয়ায় কেউ সাহায্য করতে সাহস পাননি। শেষে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স ডেকে দরজা ভাঙা হয়—তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।
আপনের নিথর দেহ পড়ে ছিল ঘরের মধ্যে, এক চোখ খোলা, অন্যটি আধা বন্ধ। জাপান পুলিশ জানিয়েছে, মৃত্যুর সময় তার ওজন ছিল মাত্র ১০ কেজির একটু বেশি এবং তিনি দুই–তিন দিন আগেই মারা গিয়েছিলেন।
এই করুণ মৃত্যু শুধু একজন তরুণের স্বপ্নভঙ্গ নয়, বরং গোটা সমাজের মানবিক ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি। একজন শিক্ষার্থী চরম দারিদ্র্যে, একাকিত্বে এবং উপেক্ষায় মারা গেল, অথচ কেউ সাহায্যের হাত বাড়ায়নি—এটাই কি আধুনিক সমাজব্যবস্থা?
আপন যদি সামান্য সহানুভূতিও পেতেন, হয়তো একদিন সফল প্রকৌশলী হয়ে ফিরে আসতেন, দেশের জন্য অবদান রাখতেন। তার মৃত্যু আমাদের শিক্ষা দেয়—আর কোনো আপন যেন হারিয়ে না যায় ক্ষুধা, অবহেলা ও নিঃসঙ্গতার মাঝে।