Ridge Bangla

মধুর খোঁজে ডাক দিন, পাশে পাবেন আফ্রিকার হানিগাইড পাখিকে

জঙ্গলের গভীরে মৌচাক খুঁজে বের করা যেমন কষ্টসাধ্য, তেমনই বিস্ময়করভাবে সেই কাজটা সহজ করে দিয়েছে একটি বিশেষ পাখি—আফ্রিকার ‘বৃহত্তর মধু নির্দেশক’ বা গ্রেটার হানিগাইড (Greater Honeyguide)। মধু খুঁজতে মানুষের ডাক শুনেই ছুটে আসে এই পাখিটি, পথ দেখায় মৌচাকের ঠিকানা।

সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় জানা গেছে, তানজানিয়া ও মোজাম্বিকের হানিগাইড পাখিরা এখনো মানুষের সঙ্গে এই অদ্ভুত ও প্রাচীন বন্ধুত্ব টিকিয়ে রেখেছে। গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন বিশ্ববিদ্যালয় ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী ডা. ক্লেয়ার স্পটিসউড। তিনি বলেন, “আমরা দেখেছি হানিগাইডরা এখনো স্থানীয় মৌয়ালদের ডাকে সাড়া দেয়, পর্যটকদের ডাকে নয়।”

বিজ্ঞানীরা একে “পারস্পরিক সহযোগিতা” হিসেবে দেখছেন। পাখিটি মানুষকে মৌচাক খুঁজে পেতে সাহায্য করে, আর মানুষ মধু সংগ্রহের পর মৌচাকে থাকা প্রোটিনসমৃদ্ধ লার্ভা ও মোম রেখে যায়, যা খেয়ে বেঁচে থাকে হানিগাইড পাখি।

গবেষক দলটি তানজানিয়া ও মোজাম্বিকের ইয়াও এবং হাডজা সম্প্রদায়ের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, মানুষের সঙ্গে এই পাখির বোঝাপড়া বহু প্রজন্ম ধরে চলে আসছে। স্থানীয়রা বাঁশি বাজিয়ে বা বিশেষ এক ধরনের ডাক দিয়ে হানিগাইডকে ডেকে আনেন। পাখিটি তখন ডানা ঝাপটিয়ে, ডাকতে ডাকতে মৌচাকের গোপন ঠিকানায় নিয়ে যায়।

তবে হানিগাইড পোষ্য নয়—না টিয়া, না ময়না। এটি সম্পূর্ণ বন্য এবং স্বাধীনচেতা। তবুও তার সঙ্গে মানুষের এই বোঝাপড়া প্রকৃতির এক অনন্য নিদর্শন। ডা. স্পটিসউড বলেন, “এই দৃশ্য প্রত্যক্ষ করা এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে অনেক জায়গায় মানুষ এই পাখির ভাষা বুঝতে পারে না। কে জানে, একদিন আমরা প্রকৃতির সঙ্গে এই অসাধারণ সম্পর্ক হারিয়ে ফেলব কি না!”

মানুষ ও প্রাণীর এই যুগলবন্দি শুধু মধু সংগ্রহকেই সহজ করে না, বরং মনে করিয়ে দেয়—প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে থাকার সেই পুরোনো, মধুর গল্প।

আরো পড়ুন