ঈদের পরদিন ৮ জুন থেকে শুরু করে ১৭ জুন রাত পর্যন্ত ময়মনসিংহ জেলায় অন্তত সাতটি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এসব ঘটনার পেছনে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ, পারিবারিক কলহ, প্রেমঘটিত সম্পর্ক এমনকি ১০ টাকার জন্য বিবাদের মতো কারণ কাজ করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ প্রশাসন।
এই ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ডে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, সমাজে সহনশীলতার অভাব এবং পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় এই সহিংসতার জন্য দায়ী। তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সমাজের সচেতন নাগরিকদেরও উদ্যোগ কামনা করেছেন।
সবচেয়ে সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে ১৬ জুন রাত ১০টার দিকে, ফুলপুর উপজেলার ভাইটকান্দি এলাকায়। নিখোঁজ থাকা ১৬ বছরের স্কুলছাত্র আবু রায়হানের মরদেহ বাড়ির সেফটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশ ধারণা করছে, পার্শ্ববর্তী এক মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের জেরে তাকে হত্যা করা হয়। অভিযুক্ত পরিবারটি এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে।
একই রাতে ত্রিশালের মাগুরজোড়া এলাকা থেকে হাফিজুর রহমান (২৩) নামের এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। ইটভাটায় মাথা থেঁতলানো অবস্থায় পাওয়া যায় মরদেহটি। পুলিশ এখনো হত্যার কারণ নিশ্চিত করতে পারেনি।
এছাড়া, পূর্ববিরোধের জেরে আহত কলেজছাত্র নাঈম মিয়া (২৩) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকায় তার জীবন ঝুঁকিপূর্ণ ছিল বলে মনে করছে পুলিশ।
১৩ জুন গৌরীপুর উপজেলায় মাত্র ১০ টাকার চায়ের বিল নিয়ে ছাত্রদল নেতা হুমায়ুন কবীরকে (২২) ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। একই দিন কুমারগাতা গ্রামে মানসিকভাবে অসুস্থ এক নাতির হাতে প্রাণ হারান বৃদ্ধা জমিলা খাতুন।
ঈদের দিন থেকে নিখোঁজ থাকা বৃদ্ধা জোবেদা খাতুনের (৭০) মরদেহ মাসকান্দা এলাকায় পাওয়া যায়। তার মৃত্যুর কারণ এখনো স্পষ্ট নয়।
ভালুকা উপজেলায় স্বামী স্বপন মিয়া (৩৯) আদালতে স্বীকার করেন যে, মাত্র ৫০০ টাকা না দেওয়ায় তিনি তাঁর স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনকে (৩৫) কুপিয়ে হত্যা করেছেন।
ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম জানান, এসব হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত নয় বরং হঠাৎ রাগ বা ক্ষোভ থেকে ঘটেছে। তিনি বলেন, পুলিশ বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করছে।
‘ময়মনসিংহ ফোরাম’-এর কো-অর্ডিনেটর সাঈদ ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয়, পারিবারিক শিক্ষার ঘাটতি এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি মানুষের মধ্যে সহিংসতা বাড়িয়ে তুলছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে পুলিশের কার্যকর তৎপরতা এবং সামাজিক সচেতনতা জরুরি বলে তিনি মনে করেন।