Ridge Bangla

বিচার বিভাগের সহায়তায় গুমের বৈধতা: তদন্ত কমিশন

বাংলাদেশে গুম শুধু গোপনে অপহরণ বা আটকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং ভুক্তভোগীদের বিরুদ্ধে সাজানো মামলার মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থাকেও “হাতিয়ার” হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে—এমন তথ্য উঠে এসেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দেওয়া গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, সন্দেহভাজন ব্যক্তি বা রাজনৈতিক কর্মীদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে গোপন স্থানে আটকে রাখা হতো, যেখানে চলত নির্যাতন ও জিজ্ঞাসাবাদ। যারা বেঁচে ফিরতেন, তাদের ১৬৪ ধারার আওতায় জোরপূর্বক মুখস্ত করানো স্বীকারোক্তি দিয়ে আদালতে হাজির করা হতো। অনেক ম্যাজিস্ট্রেট স্বীকারোক্তির স্বেচ্ছাবৃত্ততা যাচাই না করে তা অনুমোদন দিতেন এবং ভুক্তভোগীদের কারাগারে পাঠানোর পথ সুগম করতেন।

কমিশনের সদস্য নাবিলা ইদ্রিস বলেন, “পূর্ববর্তী সরকারের সময় গুমের একটি বিস্তৃত সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল। বিচার বিভাগও অনেকক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়ায় অংশীদার হয়েছে। ফলে ভুয়া মামলায় ফাঁসানো মানুষদের জীবন-জীবিকা ও সামাজিক অবস্থান ধ্বংস হয়েছে।”

মানবাধিকারকর্মী ও কমিশনের সদস্য নূর খান লিটন বলেন, “গুমকারীরা অপরাধী হলেও কিছু বিচারক তাদের সহযোগী হয়ে ওঠার ফলে বিচার ব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।”

ভুক্তভোগীদের সাক্ষ্যে উঠে এসেছে, জোর করে মুখস্থ করানো বক্তব্য না দিলে তাদের “মেরে ফেলার” কিংবা নতুন মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেওয়া হতো। আদালতে নেওয়ার সময় তাঁদের পক্ষে কোনো আইনজীবী থাকত না, ম্যাজিস্ট্রেটরাও তা উপেক্ষা করতেন। জবানবন্দি ও লিখিত কাগজে মিল না থাকলেও স্বাক্ষর দিতে বাধ্য করা হতো।

এই অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদনে কমিশন সরকারের কাছে দুটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ পেশ করেছে—একটি অতীত সংশোধনের জন্য, অন্যটি ভবিষ্যৎ প্রতিকারের লক্ষ্যে।

অতীত সংশোধনের অংশ হিসেবে ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইন সংশোধন করে এক বছরের মধ্যে বিচার কাজ সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা রাখার পাশাপাশি গুমের শিকার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সাজানো মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

ভবিষ্যতপ্রস্তাবে কমিশন বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ‘নিরাপত্তাকেন্দ্রিক মডেল’ থেকে সরে এসে বাংলাদেশে একটি ‘সামগ্রিক ও পুনর্বাসনভিত্তিক’ সন্ত্রাসবিরোধী কৌশল গ্রহণ করা উচিত, যা চরমপন্থার আদর্শিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক মূল কারণগুলো মোকাবিলা করবে।

কমিশনের ভাষ্য অনুযায়ী, গুমের দায় শুধু অপহরণকারীদের নয়, বিচার বিভাগীয় অবহেলা ও যোগসাজশ এই অপরাধকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে। এখন সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনা।

এই পোস্টটি পাঠ হয়েছে: ১২

আরো পড়ুন