বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্পে অ্যান্টিবায়োটিকমুক্ত নিরাপদ মাংস উৎপাদনের লক্ষ্যে ‘জিরো অ্যান্টিবায়োটিক’ পদ্ধতির পথিকৃৎ হিসেবে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান লাইফ সার্কেল নিউট্রিশন তৈরি করেছে হার্বাল পণ্য হার্ব-অল কক্স। এই পণ্যটি দেশে দীর্ঘদিন ধরে আমদানি ও বাজারজাত করছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। কিন্তু সম্প্রতি এই পণ্য নিয়ে উঠেছে গুরুতর অভিযোগ: ডোজ জালিয়াতি এবং মান নিয়ন্ত্রণে গাফিলতি।
বিশ্বস্ত সূত্র ও খামারিদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে জানা গেছে, স্কয়ার নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি ডোজ প্রয়োগ করছে হার্ব-অল কক্সে। তাদের দাবি, ডোজ নির্দেশনার বাইরে গিয়ে কিছু ব্যাচে অতিরিক্ত সক্রিয় উপাদান মেশানো হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মানের সঠিক ডোজ নির্দেশিকার পরিপন্থী। এই জালিয়াতির মূল উদ্দেশ্য হিসেবে সামনে এসেছে সেলস টার্গেট পূরণের চাপ, এবং কোম্পানির অতিরিক্ত মুনাফা লাভের প্রত্যাশা।
বিভিন্ন পোল্ট্রি খামারের মালিক জানিয়েছেন, নির্ধারিত নিয়ম মেনে প্রয়োগ করেও পণ্যের প্রত্যাশিত কার্যকারিতা মিলছে না। বরং কিছু ক্ষেত্রে পোল্ট্রির স্বাস্থ্যের অবনতি এবং উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তারা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন পণ্যের গুণগত মান ও নিরাপত্তা নিয়ে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভেষজ বা হার্বাল ওষুধে ডোজ সংবেদনশীলতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডোজের সামান্য তারতম্যও ওষুধের প্রভাব হ্রাস করে বা ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এ ধরনের অনিয়ম জনস্বাস্থ্য, পশুস্বাস্থ্য ও কৃষিজ খাত সবগুলোতেই বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি করে।
এদিকে, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে এই বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেয়নি। প্রতিষ্ঠানটির নীরবতা আরও প্রশ্ন তৈরি করেছে সংশ্লিষ্ট মহলে। অনেক খামারি ও ওষুধ বিপণনকারীর ভাষ্য, স্কয়ারের বিভিন্ন ওষুধেও ডোজ অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। ফলে শুধু হার্ব-অল কক্স নয়, প্রতিষ্ঠানটির অন্যান্য পণ্য নিয়েও জনমনে অনাস্থা ও সন্দেহ দানা বাধছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের পোল্ট্রি খাত বর্তমানে একটি সংবেদনশীল পর্যায়ে রয়েছে। অ্যান্টিবায়োটিকমুক্ত উৎপাদনের পথে অগ্রসরমান এই খাতের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে নিরাপদ ও কার্যকর পণ্যের উপর। সেখানে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন একটি ব্র্যান্ডের পণ্যে এ ধরনের অনিয়ম পুরো খাতকে প্রশ্নের মুখে ফেলতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের পণ্যের ডোজ, মান নিয়ন্ত্রণ ও অনুমোদন প্রক্রিয়া পুনর্মূল্যায়ন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
প্রয়োজন কঠোর তদারকি ও প্রতিটি ব্যাচের কোয়ালিটি টেস্ট রিপোর্ট প্রকাশের বাধ্যবাধকতা। সরকারি ওষুধ প্রশাসন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। অন্যথায়, পোল্ট্রি খাতের সঙ্গে জড়িত হাজারো উদ্যোক্তা ও ভোক্তার জীবন-জীবিকা বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়তে পারে।