যুদ্ধবিরতির পরোক্ষ আলোচনা চলাকালেই ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর ভয়াবহ বিমান হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৮৪ জন। কাতারে হামাস ও মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের আলোচনা চলার সময়ই এই হামলা চালায় তেলআবিব। ধারণা করা হচ্ছে, এই হামলার মূল লক্ষ্য হচ্ছে উত্তর গাজা থেকে আরও বেশি মানুষকে বাস্তুচ্যুত করা।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা স্থানীয় চিকিৎসক ও উদ্ধারকর্মীদের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বুধবার ভোর থেকে উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরসহ বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় তীব্র বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। জাবালিয়াতে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫০ জন, খান ইউনিসে ১০ জন এবং অন্যান্য এলাকায় আরও বহু হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপে মোবাইল ফোনের আলো দিয়ে শিশুদের মরদেহ বের করে আনছেন।
মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ থেকে আলজাজিরার সাংবাদিক তারেক আবু আযুম বলেন, “ইসরায়েল পরিকল্পিতভাবে আবাসিক এলাকায় হামলা চালাচ্ছে, যেন মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে অস্থায়ী তাঁবুতে বসবাসে বাধ্য হয়। এটি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক বাস্তবতা।”
আলজাজিরা আরও জানায়, ইসরায়েলি-আমেরিকান জিম্মি এডান আলেকজান্ডার মুক্তির পর ইসরায়েলি প্রতিনিধিদল দোহায় পৌঁছায় এবং কাতার, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হামাসের সঙ্গে পরোক্ষ আলোচনা শুরু হয়। ঠিক সেই সময়েই গাজায় ইসরায়েলি হামলা চালানো হয়।
এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফ দাবি করেছেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে অগ্রগতি হচ্ছে এবং ত্রাণ প্রবেশ নিয়েও আলোচনা চলছে, যদিও তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, “যুদ্ধবিরতি হলেও অভিযান বন্ধ করা হবে না।”
এদিকে চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাজ্যসহ একাধিক দেশ যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল প্রস্তাবিত ‘মানবিক সহায়তা পরিকল্পনা’ প্রত্যাখ্যান করেছে। জাতিসংঘে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ফু কং বলেন, “মানবিক সহায়তাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা অমানবিক মানসিকতার পরিচয়।”
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া সংঘাতে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৫২ হাজার ৯০৮ জন ফিলিস্তিনি। ধ্বংস হয়েছে গাজার প্রায় সব অবকাঠামো, বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ৯০ শতাংশেরও বেশি মানুষ।