Ridge Bangla

৬ বছরে শত কোটি টাকার মালিক: জনস্বাস্থ্যের ড্রাফটম্যান শাহিনের অবিশ্বাস্য উত্থান

কুমিল্লার এক দরিদ্র বাদাম বিক্রেতার ছেলে থেকে শত কোটি টাকার মালিক হয়ে ওঠা—এ যেন রূপকথার গল্প। বাস্তবে এমনই বিস্ময়কর উত্থানের নাম জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ড্রাফটম্যান শাহিন আলম। ২০১৮ সালে চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে মাত্র ছয় বছরে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি।

জানা গেছে, কুমিল্লার বরুড়ায় কর্মজীবন শুরু করেই তিনি ধীরে ধীরে বিত্তশালী হয়ে ওঠেন। বর্তমানে তার মালিকানায় রয়েছে বিলাসবহুল ৮টি স্লিপার বাস, ১১টি ডাম্প ট্রাক, ১০টি স্কেভেটর, কুমিল্লা ও ঢাকায় একাধিক ফ্ল্যাট এবং বহু বিঘা জমি। এসব সম্পদের বেশিরভাগই নিজের পরিবারের সদস্যদের নামে কিনেছেন।

স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, শাহিনের বাবা জয়নাল আবেদীন জীবনের বেশিরভাগ সময় বাদাম বিক্রি করে সংসার চালিয়েছেন। সে তুলনায় ছেলের এই অস্বাভাবিক উত্থান এলাকায় বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে।

চাকরিতে যোগ দেওয়ার পরই বরুড়া থেকে লাকসামে বদলি হন শাহিন, যেখানে তিনি স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহায়তায় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নেন। নিজের ভাই ও আত্মীয়দের নামে লাইসেন্স নিয়ে কার্যত একটি ঠিকাদারি সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন তিনি।

তদন্তে জানা গেছে, ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে “নিরাপদ পানি সরবরাহ” ও “আর্সেনিক ঝুঁকি নিরসন” প্রকল্পে গভীর নলকূপ স্থাপনের নামে ভুয়া বিল করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি। এছাড়া গ্রাউন্ড ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, পাবলিক টয়লেট এবং ওয়াশ ব্লক নির্মাণ প্রকল্পেও অনিয়ম রয়েছে।

শাহিন আলমের কেনা জমির মধ্যে চান্দিনা, বেলাশর ও কাদৈর বাজার এলাকায় জমির মূল্য ৬ কোটি টাকার বেশি। তেলিহাটিতে ৬ শতক জমির ওপর নির্মিত একটি ডুপ্লেক্স বাড়ির নির্মাণ ব্যয় ছাড়িয়েছে ২ কোটি টাকা।

২০২৩ সালে ইফাদ মোটরস থেকে ৫টি বিলাসবহুল স্লিপার কোচ কেনেন শাহিন। প্রতিটি বাসের মূল্য ২ কোটিরও বেশি। বাসগুলোর নিবন্ধন ছিল তার ছোট ভাই সোহেল রানার নামে, যা পরে নোটারি করে নিজের নামে স্থানান্তর করেন।

তার মালিকানায় রয়েছে ১১টি ডাম্প ট্রাক, ১০টি স্কেভেটর এবং একটি ব্যক্তিগত প্রিমিও গাড়ি। স্থানীয়ভাবে গুঞ্জন রয়েছে, দুবাইতেও তার একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

অবাক করার মতো বিষয় হলো, এত সম্পদের মালিক হয়েও শাহিন আলম এখনো ড্রাফটম্যান পদে আছেন। খেয়ালখুশিমতো অফিস করেন, এমনকি বর্তমানে তার বেতনও স্থগিত রয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।

এছাড়া, ২০২৪ সালের ২১ জুলাই যাত্রাবাড়ীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় মিরহাজীরবাগের বাসিন্দা বাবুল মিয়া হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ১৮ নভেম্বর যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা (নং- ৪৫, তারিখ- ১৮/১১/২০২৪) দায়ের হয়, যেখানে শাহিন আলমকে আসামি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহিন আলম বলেন, তার বিরুদ্ধে এলাকার কিছু হিংসুক ব্যক্তি অপপ্রচার চালাচ্ছে। অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তবে সাক্ষাৎকার চলাকালে তিনি সাংবাদিককে আর্থিক ‘সমঝোতা’ করার প্রস্তাব দেন, যা বিষয়টিকে আরও বিতর্কিত করে তোলে।

জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক সূত্র বলছে, ড্রাফটম্যান পদে থেকে এই পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া বাস্তবসম্মত নয়। শাহিনের সম্পদের উৎস ও আয়ের বৈধতা যাচাইয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হস্তক্ষেপ এখন সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।

এই পোস্টটি পাঠ হয়েছে:

আরো পড়ুন