২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় সূচিত হয়। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে এই দিনে। ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী আন্দোলন, আত্মত্যাগ ও তীব্র প্রতিরোধের মুখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগে বাধ্য হন এবং সামরিক হেলিকপ্টারে ভারতের উদ্দেশে পালিয়ে যান।
এই ঐতিহাসিক আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিকে কেন্দ্র করে। ২০২৪ সালের জুনে হাইকোর্টের রায়ে ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহাল হলে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা ব্যাপক বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। সরকারের দমননীতির জবাবে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে।
জুলাই মাসজুড়ে ছাত্র-জনতা, শিক্ষক, পেশাজীবী ও সাধারণ মানুষের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ওপর পুলিশ এবং সরকারি দলের অঙ্গসংগঠনের বর্বর হামলা চলতে থাকে। বিশেষ করে ৩ ও ৪ আগস্ট চালানো হামলায় যথাক্রমে ৯৩ ও ৬৬ জন নিহত হন। এতে আন্দোলন আরও বিস্ফোরণাত্মক রূপ নেয়।
৫ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির আহ্বান জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আন্দোলনকারীরা ঘোষণা করেন, “শেখ হাসিনার পতন না হওয়া পর্যন্ত জুলাই মাস শেষ হবে না”— তাদের ভাষায়, এটাই ছিল ৩৬ জুলাই। কারফিউ উপেক্ষা করে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখো মানুষ ঢাকার পথে রওনা দেন। শাহবাগে মিলিত জনস্রোতের ঢেউ ঢাকাকে আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করে।
সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান ঘোষণা দেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। এরপর জনতা গণভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও জাতীয় সংসদ ভবনে প্রবেশ করে বিজয় উদযাপন করে। শেখ হাসিনা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ক্ষমতা আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করলেও আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ চাপের মুখে নতিস্বীকার করে পালিয়ে যান।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, এই অভ্যুত্থানে ১,৪০০ জন নিহত হন এবং আহত হন ২০,০০০ জনেরও বেশি। আন্তর্জাতিক মহল একে “গণমানুষের বিজয়” ও “আধুনিক যুগের অন্যতম বৃহৎ ছাত্র-অভ্যুত্থান” হিসেবে আখ্যা দেয়।
২০০৯ সাল থেকে টানা শাসনকালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন, গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ, বিরোধী মত দমন, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ উঠেছিল। কোটা সংস্কার আন্দোলনের দমনই শেষ পর্যন্ত তার শাসনের পতন ঘটায়।