পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণ থেকে বের হয়েছে এবারের বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা। তবে এবার শোভাযাত্রাটি ছিল কিছুটা ব্যতিক্রমধর্মী। কারণ, এতে অংশগ্রহণ করেছে দেশের ২৮টি জাতিগোষ্ঠীর মানুষ। এছাড়াও যোগ দিয়েছিলেন বিদেশি শিক্ষার্থী, পর্যটক এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদের সামন থেকে শোভাযাত্রাটি শুরু হয়ে শাহবাগ, টিএসসি, শহীদ মিনার হয়ে পুনরায় চারুকলায় গিয়ে শেষ হয় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে।
এবারের শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য ছিল ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’। এতে বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, গ্রামবাংলার কৃষিজীবন এবং সাম্প্রতিক গণ-আন্দোলনের প্রতীকী উপস্থাপন ছিল চোখে পড়ার মতো। কৃষকদের নেচে-গেয়ে ফসল তোলার দৃশ্য, বাঙালির জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ইলিশ ও তরমুজের মোটিফ এসবই ছিল মূল আকর্ষণ।
শোভাযাত্রার মূল আকর্ষণ ছিল ‘স্বৈরাচারের প্রতিকৃতি’। এই প্রতিকৃতিটি সম্প্রতি অগ্নিসংযোগে ধ্বংস হয়ে গেলেও খুব অল্প সময়ে সেটি ককশীটের মতো উপকরণ দিয়ে পুনরায় নির্মাণ করা হয়। এছাড়াও ১৫ ফুট উচ্চতার একটি পানির বোতলের থিম ব্যবহার করা হয়, যা ‘পানি লাগবে’ আন্দোলনের শহিদদের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
এবার শোভাযাত্রায় ছিল সাতটি বড়, সাতটি মাঝারি এবং সাতটি ছোট মোটিফ। তৈরি করা হয়েছিল বাঘ, ইলিশ, তরমুজ, শান্তির পায়রা, পালকিসহ আরও নানা প্রতীকী ভাস্কর্য। নিরাপত্তার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ ব্যবহার করেছে ১৮টি ইন্ডিয়ান হরিয়ানা ঘোড়া।
চারুকলা অনুষদের শোভাযাত্রার ইতিহাস বেশ পুরনো। ১৯৮৬ সালে যশোরের চারুপীঠ প্রথমবারের মতো পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে শোভাযাত্রার আয়োজন করে। এরপর ১৯৮৯ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ এই আয়োজন শুরু করে ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ নামে। নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পর এটির নাম হয় ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’। তবে এবার এই ঐতিহ্যবাহী আয়োজনটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’।