দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোকে ঘিরে দীর্ঘদিন ধরেই সক্রিয় রয়েছে বিভিন্ন বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট। জরুরি প্রয়োজনের সময়ে রোগী পরিবহনের সুযোগকে পুঁজি করে এসব সিন্ডিকেট রোগী ও স্বজনদের কাছ থেকে নিজেদের ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করছে। ভাড়া নির্ধারণের কোনো সরকারি নীতিমালা না থাকায় যাত্রীদেরকেও পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে।
রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলো ঘুরে দেখা গেছে, আলাদা আলাদা চালক আলাদা আলাদা ভাড়া দাবি করছেন একই দূরত্বে। ভাড়া দেখা যাচ্ছে ৬ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। অনেক ক্ষেত্রেই অক্সিজেন বা এসি ব্যবহারের নামে অতিরিক্ত ফি যুক্ত করা হয়। সরকারি নির্ধারিত ভাড়া থাকলেও বাস্তবে তা এখনো কার্যকর নয়।
ময়মনসিংহ ও শরীয়তপুরে সম্প্রতি বাইরের অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করতে গিয়ে সংঘবদ্ধ চক্রের বাধার মুখে পড়েন রোগীর স্বজনরা। এমনকি সিন্ডিকেটের বাধার কারণে গত বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) শরীয়তপুরে শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকা এক নবজাতকের অ্যাম্বুলেন্সের তেতরেই মৃত্যু হয়। স্থানীয় চালকেরা অভিযোগ করেন, রোগী নিলেও ভাড়ার অর্ধেক টাকা সিন্ডিকেটকে দিতে হয়। অন্যথায় তাদের গাড়ি পরবর্তীতে আর হাসপাতালে ঢুকতে দেওয়া হয় না।
অধিকাংশ হাসপাতালে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও চালকের অভাব বা গাড়ি অচল থাকায় সেগুলো কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যাচ্ছেনা। কোথাও ৫-৬টি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও সচল আছে ২-৩টি এমন ঘটনাও দেখা গেছে। ফলে রোগীরা বেসরকারি সিন্ডিকেটের দাপটের বাইরে কোনো বিকল্প খুঁজে পান না। বাধ্য হয়েই এসব সিন্ডিকেটের দারস্থ হতে হচ্ছে।
হাসপাতালের কিছু কর্মচারী ও প্রভাবশালী মহলের সহযোগিতায় এসব সিন্ডিকেট চালু রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। রোগী সরবরাহের বিনিময়ে কমিশন নেওয়া হয়। ফলে প্রশাসনের অভিযানের পরেও এই চক্র ভাঙা যাচ্ছে না।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)–এর বরিশাল মহানগরের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম মনে করেন, মানুষের জীবন জিম্মি করে ভাড়া আদায় মানবিকতার পরিপন্থী ও বেআইনি। রাজনৈতিক প্রভাব ও আইন প্রয়োগের দুর্বলতার কারণেই এ সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে টিকে আছে। এখনই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।