মহররমের ১০ তারিখ, পবিত্র আশুরা মুসলিম উম্মাহর কাছে এক শোকাবহ, তাৎপর্যপূর্ণ ও আত্মশুদ্ধির দিন। এ দিনে অন্যতম বিশেষ ইবাদত হলো রোজা রাখা, যা রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে পালন করেছেন এবং সাহাবাদেরও উৎসাহিত করেছেন। আশুরার রোজা যেমন অতীত গুনাহ মোচনের উপায়, তেমনি তাওহিদ ও ন্যায়ের পথে অটল থাকার শিক্ষা দেয়।
হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় হিজরত করে দেখতে পান, ইয়াহুদিরা আশুরার রোজা পালন করছে। কারণ জানতে চাইলে তারা জানায়, এ দিন হজরত মূসা (আ.) ও তাঁর জাতি ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তি পেয়েছিল। তখন রাসুল (সা.) বলেন, “আমরা তাদের চেয়ে মূসার প্রতি বেশি হকদার।” (বুখারি)। তিনি নিজে রোজা রাখেন এবং সাহাবাদেরও নির্দেশ দেন।
মুসলিম শরীফের একটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, “আশুরার রোজা বিগত এক বছরের গুনাহ মোচন করে।” ফিকহবিদদের মতে, আশুরার রোজা সুন্নাতে মুআক্কাদা বা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ। হানাফি মতে এটি মুস্তাহাব, এবং নবম ও দশম কিংবা দশম ও একাদশ মহররমে রোজা রাখা উত্তম। শাফেয়ি, মালিকি ও হাম্বলি মাজহাবেও একই মত। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইহুদিদের সঙ্গে সাদৃশ্য এড়াতে বলেছেন, “আশুরার সঙ্গে একদিন আগে বা পরে আরেকটি রোজা রাখো।” (মুসনাদ আহমাদ)
আশুরার রোজা আত্মশুদ্ধি, তওবা, নৈতিকতা ও ঐতিহাসিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে। এ দিন হজরত মূসা (আ.)-এর মুক্তি, হজরত নূহ (আ.)-এর নৌকার স্থিতি, হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর অগ্নিকুণ্ড থেকে মুক্তির মতো ঐতিহাসিক ঘটনাও সংঘটিত হয়েছে বলে হাদিসে উল্লেখ আছে। এসব আমাদের ঈমান, ধৈর্য ও আল্লাহর প্রতি ভরসাকে মজবুত করে।
যদিও আশুরার দিনে ইমাম হোসাইন (রা.)-এর শাহাদাত একটি বড় ঐতিহাসিক ঘটনা, তবে আশুরার রোজার সঙ্গে তার শাহাদাতের শারঈ কোনো সম্পর্ক নেই। তবুও এই দিন আমাদের ত্যাগ, সাহস ও সত্যের পথে অটল থাকার শিক্ষা দেয়।
আশুরার করণীয়:
৯ ও ১০ কিংবা ১০ ও ১১ মহররম রোজা রাখা, কুরআন তিলাওয়াত, তওবা, দান-সদকা, এবং ইমাম হোসাইন (রা.)-এর ন্যায়পরায়ণতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ। বিদআত থেকে বিরত থেকে আশুরার প্রকৃত চেতনাকে ধারণ করা প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব।